করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সংকটের কারণে দীর্ঘ ১১ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বলা বাহুল্য, এ দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে তৈরি হয়েছে নানা সমস্যা। বলা চলে, বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে তারা। বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনিশ্চয় তা আর চলতে দেওয়া যায় না। তাই তারা পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলছেন। তারা বলছেন, একই দিনে সব ক্লাসের পরিবর্তে রোটেশনভিত্তিক ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিতে তারা জোর দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এটা সত্যি, দেশে করোনা সংক্রমণের হার এখন নিুমুখী।
মৃত্যুহারও কমছে। করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে বলা চলে। উপরন্তু, দেশে চলছে টিকাদান কর্মসূচি। ফলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে ও হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরাও মনে করি, খুব দ্রুতই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া যেতে পারে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন, সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি চলমান থাকায় যে কোনো সময় খুলে দেওয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সঙ্গে কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে অবশ্যই। সেগুলোর একটি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকা প্রদান। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টিকা নিতে হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই টিকা প্রদান শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ইতোমধ্যে শিক্ষা খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু হলে সর্বপ্রথম লেখাপড়ার ঘাটতি পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ব্যবস্থা কী হতে পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষাবিদ, শিক্ষা-গবেষক থেকে শুরু করে শিক্ষা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিন্তাশীল ব্যক্তিদের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করা যেতে পারে। তৃতীয় বিষয়টি হলো, শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে।
মাস্ক পরা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং একে অপরের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা-মেনে চলতে হবে কঠোরভাবে। মোট কথা, শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে এমন সবকিছু থেকেই বিরত থাকতে হবে। এ ধরনের প্রস্তুতির পরও যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে দ্রুতই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
দীর্ঘ ১১ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়াসহ যেসব সংকট তৈরি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মানসিক অসুস্থতা। শিক্ষার ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষাথীদের অনেকেই অশিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের পুনরায় শিক্ষামুখী করে তোলার বিষয়টি এক বড় চ্যালেঞ্জ বটে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়টিতে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাই যদি আন্তরিক থাকেন, তাহলে স্বাভাবিক ও সুস্থ ধারার শিক্ষা কার্যক্রম চালু হতে বেশি সময় লাগবে না।