করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার ঝালকাঠির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। তবে, বন্যা ও জোয়ারের পানিতে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। এদিকে টানা বন্ধ থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো এতোটাই দুর্বল হয়েছে, যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
জানা যায়, ঝালকাঠি জেলায় ৯৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কলেজ ২৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৭৩টি, নিম্ন মাধ্যমিক ২৪, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৮৫টি ও মাদরাসা রয়েছে ১২৩টি। এর মধ্যে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরে এবং দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে তলিয়ে যায়। পানি স্থায়ী হলে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করানো সম্ভব হয় না। কখনো উঁচু স্থানে, কখনো আবার পাশের কোন প্রতিষ্ঠানে নেওয়া হয় ক্লাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, নলছিটি উপজেলার পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বন্যা ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। টিনসেডের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে পানি জমে থাকায় বেঞ্চের নিচের মাটি হাঁটু সমান কাদা।
এ অবস্থায় গত রোববার বিদ্যালয়টি খুললেও পাঠদান করানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। মাঠভরা পানি আর শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ভুতুরে অবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত। যেকোন সময় বিদ্যালয়টির অবকাঠামো ভেঙে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ব্যহত হচ্ছে স্কুলের ৩১৯ শিক্ষার্থীর ক্লাস।
পানি উঠে পাশের আখরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ছোট একটি ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এদিকে সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের অর্ধেকাংশ নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পাশের একটি মাদরাসায় পাঠদান করানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নদীতীরবর্তী ও দুর্গম এলাকার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও বন্যার পানি এখনো ঢুকে থাকায় সবগুলো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও বন্যার পানিতে নলছিটির মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেরনবাড়িয়া সিএইচইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেরনবাড়িয়া আলিম মাদরাসা, জুরকাঠি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জুরকাঠি দাখিল মাদরাসাসহ জেলার ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টিনসেডের অবকাঠামোর বিদ্যালয়গুলোতে ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. সাকিব দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়ের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের দুটি টিনসেডের ঘরে আমাদের পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এর একটিতেও পাঠদান হচ্ছে না। পানি ঢুকে বেঞ্চের নিচে কাদা জমে আছে। করোনায় অনেক দিন বন্ধ থাকার পরে স্কুল খুললেও আমাদের ক্লাস হয়নি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অনেক আশা নিয়ে স্কুলে এসেছিলাম, কিন্তু ক্লাসে ঢুকতে পারিনি। খুবই কষ্ট হচ্ছে। পুরো বিদ্যালয়টি পানিতে তলিয়ে আছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রুহুল আমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পানিতে তলিয়ে থাকায় পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ উঁচু স্থানে রয়েছে, সেখানে একটি ক্লাস নেওয়ার মতো ব্যবস্থা করেছি। আমাদের বিদ্যালয়টি অনেক পুরনো, এখানে একটি ভবন দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।
মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র হৃদয় দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি পানিতে তলিয়ে আছে। খেলার মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে থাকায় ভয় পাচ্ছি।
মাটিভাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহসিন আলী মৃধা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিদ্যালয় খোলা রেখেছি। কিন্তু বন্যার পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ তলিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের কোন রকমের ক্লাস করানো হচ্ছে। আমাদের কোন ভবন নেই, টিনসেডের ঘর। এ অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
নলছিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার আজিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এবং অবকাঠামো ভেঙে পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপাতত নিজ খরচে মেরামত করার জন্য বলা হয়েছে। প্রয়োজনে পাশের কোন উঁচু স্থানে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে। কষ্ট হলেও পাঠদানের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।