এ বছরের বন্যায় দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ যাবত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ হাজার ৯১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও এখনও পানি নামেনি। অন্যদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরূপণের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তথ্যানুযায়ী, ১ হাজার ২০০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার সহযোগী দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শুক্রবার (২৮ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ডুবে গেছে। কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুকপানি। এতে চেয়ার, বেঞ্চসহ আসবাবপত্র ও শিক্ষা উপকরণের ক্ষতি হয়েছে। কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তায় আছে। একে তো করোনা মহামারী তার ওপর বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে বিপর্যয় আরও বেড়েছে।
বলাবাহুল্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায় প্রতি বছরই কমবেশি আঘাত হানে বাংলাদেশে। আর এবারের বন্যা নদী তীরবর্তী মানুষের সক্ষমতাকে আঘাত করেছে। বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু, হালের বলদ স্থানাভাবে ও খাদ্য সংকটে জলের দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। আমরা মনে করি, এসব মানুষের সক্ষমতাকে ফিরিয়ে দিতে জরুরি কর্মসূচি নিতে হবে। রাষ্ট্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজের পরিকল্পনা হতে হবে যুগপোযোগী।
আমরা মনে করি, সরকারের পরিকল্পিত কার্যক্রমই ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর সহায়ক শক্তি। পাশাপাশি নদীসংক্রান্ত নিরন্তর দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানেয়র ব্যাপারে মনোযোগ দেয়াও আবশ্যক। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর তলদেশ ভরে ওঠার ফলে অল্প পানিতেও নদী তীরবর্তী এলাকা ডুবে বন্যার সৃষ্টি করে। এজন্য নদী খনন অগ্রাধিকারভাবে করা জরুরি। নদী তীরকে স্থায়ী অবকাঠামোর আকারে শাসনের মধ্যে নেয়া যেতে পারে। নদী কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করে ছোট-বড় নদীর প্রবাহ নিয়মিতকরণ, অপদখল ও নদীদূষণ দূর করাও অপরিহার্য। নদীকে মেরে ফেলে দুর্যোগ-দুর্ভোগের সমাধান হবে না। নদীর পৃথক সত্তাকে মেনে নিয়ে এবং বাঁচিয়ে রেখেই আমাদের উন্নয়ন পরিকাঠামোসহ সব উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
সর্বোপরি, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে, বন্যা শেষ হলে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কার ও মেরামত কাজ শুরু করা দরকার। আমরা জানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপৎকালীন সংস্কার কাজের জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রয়েছে। এসব অর্থের সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে দ্রুতই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।