বগুড়ার শিবগঞ্জে মেহেদী হাসান নামে এক কিশোর বাউল শিল্পীকে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগে এক স্কুলশিক্ষকসহ তিন গ্রাম্য মাতবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ উপজেলার জুড়ি মাঝপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- শিবগঞ্জ উপজেলার গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও জুড়ি মাঝপাড়ার বাসিন্দা মেজবাউল ইসলাম, একই গ্রামের শফিউল ইসলাম খোকন ও তারেক রহমান। বাউল শিল্পী মেহেদী (১৬) জুড়ি মাঝপাড়ার বেলাল হোসেনের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, মেহেদী গুজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর্থিক অনটনের কারণে আর পড়াশোনা করতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী ধাওয়াগীর গ্রামের মতিন বাউলের সঙ্গে পরিচয় হলে তার সঙ্গে চলাফেরা শুরু করে। মেহেদী কয়েক বছর ধরে মতিন বাউলের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। মেহেদী সাদা লুঙ্গি, সাদা ফতুয়া এবং সাদা গামছা ব্যবহার করত। পাশাপাশি বাউলরীতি অনুযায়ী মাথায় লম্বা চুল রাখে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা মেহেদীর পোশাক এবং চুল নিয়ে বিভিন্ন সময় অশালীন মন্তব্য ও কটাক্ষ করেছে। এসবের প্রতিবাদ করায় ওই তিনজনসহ পাড়ার কয়েকজন গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে মেহেদীর বাড়িতে যায়। তারা মেহেদীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জোর করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর করা হয়। মাতবররা ওই সময় তাকে বাউলগান ছেড়ে দিতে বলে এবং মাথার চুল আবার বড় করলে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেয়। এরপর থেকে লজ্জা ও ভয়ে কয়েকদিন বাড়ির বাইরে যায়নি মেহেদী।
শিবগঞ্জ থানা পুলিশ খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে তাকে থানায় নিয়ে যায়। থানায় মেহেদীর কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে মামলা করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। পরে গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। জানা যায় মেহেদীর মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় তার বাবা বেলাল হোসেনের সায় ছিল। তিনি ছেলের এসব কাজ পছন্দ করতেন না।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক মেহেদিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় এবং অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়। মেহেদীর নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।