বিদেশি যোগসূত্র আজও অজানা - দৈনিকশিক্ষা

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডবিদেশি যোগসূত্র আজও অজানা

মিজানুর রহমান খান |

সংবিধান, আইন ও সংসদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক প্রয়াত মিজানুর রহমান খান বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক দুর্লভ নথি প্রকাশ করেছিলেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর অন্যতম হলো- ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’ ও  ‘১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল’। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে  পত্রপত্রিকাতেও অনেক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আছে তার। এই লেখা তেমনই একটি কালোত্তীর্ণ প্রতিবেদন। এতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে বিদেশি যোগসূত্র অনুসন্ধান করেছেন লেখক। ওই সময়ে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট বিদেশি শক্তিগুলোর কার কী ভূমিকা ছিলো তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। সময়ের উপযোগিতা বিবেচনায় অনুসন্ধানী পাঠকদের জন্য লেখাটি পুন:প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের বিষয়টি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। বিদেশিদের মধ্যে এ পর্যন্ত দুজন পুলিৎজার বিজয়ীসহ চার মার্কিন সাংবাদিক এ ঘটনায় মার্কিন সংশ্লিষ্টতার সপক্ষে এবং পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস তার বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন।

তবে ১৯৭৯ সালে মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলৎজ ও কাই বার্ডের (পুলিৎজার প্রাপ্ত) লেখা ‘বাংলাদেশ দ্য আনফিনিশড রেভল্যুশন’কে তিন দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামীদামি লেখক নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখিয়ে চলেছেন। লিফশুলৎজ ছাড়া আর কোনো বিদেশি সাংবাদিক এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অনুসন্ধান চালাননি।

লরেন্স লিফশুলৎজ স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এর পেছনে সিআইএর হাত ছিল এবং মার্কিন সরকারের উচিত এটি তদন্ত করে দেখা। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কখনো এই দাবি করেনি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে, বিশেষ করে সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

এর আগে ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. হেনরি কিসিঞ্জারের আলাপ হয়। এ সময় কিসিঞ্জার তাঁকে বলেন, ইয়াহিয়া নিশ্চিত ছিলেন যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না। তাই তিনি সত্তরের নির্বাচন দিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনার প্রথম সরকারে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ঢাকা সফর করেন। এই সফর সামনে রেখে এক নিবন্ধে লিফশুলৎজ কিসিঞ্জার প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন ক্লিনটনের সঙ্গে তুলতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পঁচাত্তরে ফারুক ও রশীদ ব্যাংকক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়েছিলেন। পঁচাত্তরের ২০ নভেম্বর ফারুক সেখানে এক মার্কিন কূটনীতিকের কাছে দাবি করেছিলেন, ভারত যাতে হস্তক্ষেপ না করে, সে জন্য চীন তার সীমান্তে সামরিক মহড়া দেখিয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জার তাঁদের আশ্রয় আবেদন ১৪ নভেম্বর ‘বিবেচনা’ করছিলেন বলে জানালেও ছয় দিন পরে নাকচের সিদ্ধান্ত দেন।

ঢাকা, ব্যাংকক ও দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূতেরা তাঁদের আশ্রয় না দিতে জোর সুপারিশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর হত্যায় দণ্ডিতদের বিষয়ে ঢাকার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ২০০৯ সালের ৬ আগস্ট একটি বার্তা পাঠান। এতে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে রাশেদ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন ইমিগ্রেশন বিচারক গ্রহণ করেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।

আগস্ট হত্যাকাণ্ডে বিদেশি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয় যে, মার্কিন সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য পঁচাত্তর সালেই সিআইএর কথিত সম্পৃক্ততার অভিযোগ নাকচ করেছে এবং সরকারিভাবে তারা সেই অবস্থানই ধরে রেখেছে। গত ৪০ বছরে বিভিন্ন বিদেশি নেতার হত্যাকাণ্ডে সিআইএর সংশ্লিষ্টতা-সংক্রান্ত অনেক নথি অবমুক্ত করা হয়েছে। চিলির সালভাদর আলেন্দের মতো অনেক বিদেশি নেতা হত্যা বা অভ্যুত্থানে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার সপক্ষে নথি পাওয়া গেছে। মুজিব হত্যাকাণ্ডে তেমন কিছু মেলেনি। তবে পঁচাত্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ও তাঁর প্রশাসন যে মুজিব সরকারের প্রতি বৈরী ছিল, তার সপক্ষে বহু নথিপত্র পাওয়া গেছে। যদিও পঁচাত্তরের ৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টারের সঙ্গে সাক্ষাতে মার্কিন খাদ্যসাহায্যের জন্য গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক সরকারকে উৎসাহের সঙ্গে মার্কিনরা যে সমর্থন দিয়েছিল, তাও খুব স্পষ্ট। বহু নথি আজও অপ্রকাশিত। কোনো কোনো নথির বিশেষ অংশ মুছে ফেলা হয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় মনে হয়, ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের আগে ও পরের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং অভ্যুত্থানের সমর্থনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইঙ্গিত ও আলামতগুলো নির্মোহভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।

এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের সাধারণ বিচার হয়েছে। বিদ্রোহ হিসেবে সামরিক অপরাধের বিচার সেনা আইনে হয়নি। সাধারণ বিচারের প্রক্রিয়ায় বৈদেশিক সূত্রগুলোর সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গ একেবারেই অনালোচিত থেকে গেছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে এ পর্যন্ত শুধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের অন্য কোনো দিকের অনুসন্ধান বাংলাদেশ করেনি।

১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শেখ মুজিব হত্যা তদন্তে ব্রিটেনে বেসরকারিভাবে স্যার থমাস উইলিয়ামস, নোবেলজয়ী সিয়ান ম্যাকব্রাইড, স্যার জেফরি থমাস এবং অবরে রোজ সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশনের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম: শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি। কিন্তু কমিশন তদন্ত শেষ করতে পারেনি।

বাংলাদেশে ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এই কমিশন কখনো বৈঠকে বসেনি।

মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলৎজ ১৯৮০ সালে মার্কিন কংগ্রেসকে দিয়ে একটি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা সফল হয়নি। লিফশুলৎজ মার্কিন কংগ্রেসের বৈদেশিক কমিটির স্টিফেন সোলার্জকে চিঠি লিখেছিলেন। ১৯৮০ সালের ৩ জুন স্টিফেন সোলার্জ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য লেস এসপিনকে লিখেন, ‘বাংলাদেশে সিআইএর কার্যক্রম খতিয়ে দেখার এখতিয়ার তাদের কমিটির নয়, এটা গোয়েন্দা-সংক্রান্ত বাছাই কমিটির। আমি এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে একটি তদন্ত করেছি কিন্তু এর ফলাফলে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি লিফশুলৎজের আনা অভিযোগ গ্রহণ বা বর্জন করতে পারি না।’

মার্কিন সাংবাদিক ক্রিস্টোফার এরিক হিচিন্স ২০০১ সালে তাঁর ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার বইয়ে মূলত লিফশুলৎজের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে মুজিব হত্যায় কিসিঞ্জারকে দায়ী করেন। পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাংবাদিক সেইম্যুর হার্শ ১৯৮৩ সালে তাঁর প্রাইস অব পাওয়ার বইয়ে এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের দিকে অভিযোগের তির নিক্ষেপ করেন লিফশুলৎজের বরাতেই। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক লেখালেখিতেও মুজিব হত্যাকাণ্ড বিদেশি লেখক ও গবেষকদের মনোযোগের বিষয় হয়ে আছে।

২০১০ সালে রবার্ট এস অ্যান্ডারসন তাঁর নিউক্লিয়াস অ্যান্ড নেশন বইয়ে দাবি করেন যে, বাংলাদেশ অভ্যুত্থান সম্পর্কে ইন্দিরা গান্ধী ‘অন্যান্য সূত্র’ থেকে খবর পেয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালে জান্নিকি অ্যারেন্স ভারতের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলিতে লেখেন, সপরিবারে মুজিব হত্যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই সিআইএর সহায়তায় ঘটেছে। পিটার ডেল স্কট সাবেক কানাডীয় কূটনীতিক ও সাংবিধানিক আইনজীবী। ২০০৮ সালে তিনি তাঁর রোড টু নাইন ইলেভেন বইয়ে লিফশুলৎজ ও হিচেন্সের বরাতে উল্লেখ করেন, ১৯৭৪ সালে কিসিঞ্জারের ঢাকা সফরের পরে মার্কিন দূতাবাসের একটি অংশ গোপনীয়তার সঙ্গে একদল বাংলাদেশি কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ড. পামেলা কে গিলবার্ট ২০০২ সালে তাঁর ইমাজিনড লন্ডনস বইয়ে লিখেছেন, ‘সিআইএ মুজিব হত্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রতিক্রিয়াশীল বাঙালিদের ব্যবহার করেছিল।’

উল্লেখ্য, পুলিৎজার বিজয়ী কাই বার্ডকে নিয়েই লিফশুলৎজ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ: দ্য আনফিনিশড রেভল্যুশন বইয়ে দ্য মার্ডার অব মুজিব নামে একটি অধ্যায় লেখেন। তাঁরা এর আগে যৌথভাবে নিবন্ধ প্রকাশ করেন। কাই বার্ড ১৮ বছর বয়সে প্রথম ঢাকায় আসেন। মুজিবকে দেখতে তিনি তাঁর মার্কিন কূটনীতিক বাবার সঙ্গে দিল্লির বিমানবন্দরে ১০ জানুয়ারি হাজির ছিলেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় কাই বার্ড লিফশুলৎজের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কফি শপে ছিলেন। তবে তাঁরা দুজনের কেউ বোস্টারের কথা টেপ করেননি। এখন লিফশুলৎজ ছাড়া কাই বার্ড সাক্ষ্য দিতে পারেন যে, মুজিব হত্যায় মার্কিন প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়ে বোস্টার দুজনকে কী বলেছিলেন। উল্লেখ্য, বোস্টারই ছিলেন লিফশুলৎজের সেই গোপন সূত্র, যার কাছ থেকে তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে খুনিদের পূর্ব যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন।

এ বিষয়ে কাই বার্ডের লেখা চিঠির উত্তরেই কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘আপনার অভিযোগ সত্য থেকে অনেক দূরে।’ লক্ষণীয় যে সোলার্জকে লিফশুলৎজ জানিয়েছিলেন, ১৯৭৫ সালে আমরা প্রথমে লিখেছিলাম, মুজিব হত্যায় মার্কিন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা ছয়জন জুনিয়র অফিসারের কাজ। পরে আমরা সিআইএ-সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাই।

এখানে উল্লেখ্য, সোভিয়েত সরকার পঁচাত্তরে সিপিবিকে বলেছিল, সিআইএ এতে জড়িত নেই। ২০০৫ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টোফার অ্যান্ড্রু এবং সোভিয়েত সপক্ষত্যাগী এজেন্ট ভাসিলি মিত্রখিন তাঁদের দ্য মিত্রখিন আর্কাইভ টু দ্য কেজিবি অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড বইয়ে উল্লেখ করেন, পঁচাত্তরে সোভিয়েতরা বিশ্বাস করেছিল যে, মুজিব হত্যায় সিআইএ জড়িত নেই।

মুজিব হত্যার কারণ হিসেবে দুটি ভাষ্য সাধারণভাবে গুরুত্ব পেয়ে চলেছে। প্রথমটি হলো একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তার ব্যক্তিগত ক্ষোভ অভ্যুত্থান বয়ে এনেছে। অন্য মতটি হলো, বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হত্যা করে কিসিঞ্জার প্রশাসন প্রতিশোধ নিয়েছে।

লিফশুলৎজ ও ম্যাসকারেনহাস দৃশ্যত দুটি পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে জোরালো করেছেন। ম্যাসকারেনহাস মুজিব হত্যার কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত রোষ বা অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং লিফশুলৎজ বিদেশি হস্তক্ষেপ বা সিআইএর মদদের ওপর সরাসরি আলো ফেলতে সচেষ্ট হয়েছেন। ম্যাসকারেনহাস কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই শুধু ফারুক-রশীদের বরাতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে পূর্ব যোগাযোগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন দলিলপত্রই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। ১৯৭২ থেকে ফারুক নিয়মিতভাবে মার্কিন মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। এমনকি ১৯৭৪ সালে তিনি মার্কিনদের কাছে তাঁর অভ্যুত্থান পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

ম্যাসকারেনহাস লিখেছেন, দুর্ভাগ্যবশত লিফশুলৎজ কে বা কারা মার্কিন দূতাবাসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, সেই বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করেননি কিংবা তা পারেননি। ফারুক ও রশীদ উভয়ে শপথপূর্বক আমাকে বলেছেন, তাঁরা কোনো বিদেশি মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। ম্যাসকারেনহাস এ বিষয়ে ফারুক-রশীদের বক্তব্য এতটাই নির্ভরযোগ্য মনে করেছেন যে তিনি তা বোঝাতে এ-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বাক্যে ইংরেজিতে ‘নট’ শব্দটি বড় হরফে লিখেছেন।

মার্কিন লেখক জেমস জে নোভাক ১৯৮২-৮৫ সালে বাংলাদেশে এশিয়া ফাউন্ডেশনের আবাসিক প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি দৃশ্যত অভ্যুত্থানকে শুধুই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে তাঁর বর্ণনায়, ‘এমনকি তাঁর ঘাতকেরা স্বীকার করেন, একটি জাতি (তাঁর শ্রেষ্ঠতম উত্তরাধিকার) সৃষ্টি করেছেন বলে শেখ মুজিব নিহত হননি, তিনি একদলীয় রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে “একটি বিপ্লব সম্পূর্ণ” করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সে রাষ্ট্র অন্তরঙ্গভাবে কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। তিনি নিহত হয়েছিলেন কারণ, জনগণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।’

মার্কিন অধ্যাপক মার্কাস ফ্রান্ডা দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘকাল গবেষণা করেছেন। ১৯৮২ সালে তিনি তাঁর বইয়ে লিখেন, ‘মার্কিন সাহায্য গ্রহণ করা নিয়ে মুজিব সরকারের মধ্যে তীব্র টানাপোড়েন দেখা দেয়। যেকোনো ধরনের সরাসরি মার্কিন সাহায্য গ্রহণ নিয়ে তাজউদ্দীনের মতো কট্টরপন্থীরা বিরোধিতা করেন।’

১৯৯৩ সালে মার্কিন শিক্ষাবিদ ও লেখক স্ট্যানলি উলপার্ট তাঁর জুলফি ভুট্টো অব পাকিস্তান বইয়ে লিখেছেন, মুজিব হত্যার তিন সপ্তাহ পরে ভুটো দুই দেশকে একত্র করে কনফেডারেশন গঠনে তাঁর বিশেষ দূত হিসেবে মাহমুদ আলীকে (বাঙালি রাজাকার) লন্ডন পাঠিয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে বেগম আক্তার বেবি ভুট্টোকে লেখা চিঠিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ ইস্যুতে আপনি সকল প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেছেন, যা প্রশংসার ঊর্ধ্বে।’

এই প্রতিবেদক অভ্যুত্থানের আগের দুই বছরের বিভিন্ন সময়ে কিসিঞ্জার ও ভুট্টোর মধ্যকার আলোচনার গোপন নথি দেখেছেন। এতে দেখা যায়, তাঁরা বাংলাদেশে একটি সম্ভাব্য সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মার্কিন নথিতে এ বিষয়ে তাঁরা মুজিবকে সতর্ক করেছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু এ-বিষয়ক নির্দিষ্ট নথির হদিস মেলেনি। তবে ১৯৮৯ সালে সানডে পত্রিকায় (২৩-২৯ এপ্রিল, ৮৯) ‘র’-এর প্রধান রমেশ্বর নাথ কাও লিখেছেন, ‘ইন্দিরার অনুমোদনে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে আমি ঢাকা সফর করি। গণভবনের বাগানে আমি তাঁকে সতর্ক করি। এরপর পঁচাত্তরের মার্চে পুনরায় সতর্ক করতে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ঢাকায় পাঠাই। এসব সতর্কতা মুজিব অগ্রাহ্য করেছিলেন।’

পঁচাত্তরের ২২ মার্চ মিসরের আসওয়ান সফররত কিসিঞ্জারের কাছে একটি টেলিগ্রাম যায়। তার শিরোনাম: ‘সিআইএ এবং বাংলাদেশে একটি সম্ভাব্য অভ্যুত্থান।’ এর বিস্তারিত তথ্য জানতে পারিনি। কারণ, তা অবমুক্ত করা হয়নি বা মুছে ফেলা হয়েছে। এর দুই দিন আগে ২০ মার্চ ফারুক রহমান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038020610809326