বিমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের হিড়িক - দৈনিকশিক্ষা

বিমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের হিড়িক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের হিড়িক লেগেছে। এক দিনেই ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন তিন ট্রাক্টরচালকও। ট্রাক্টরচালক পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ায় বিমানের জনবল পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় জনবল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে একটি সিন্ডিকেটের স্বার্থরক্ষার অভিযোগ উঠেছে।

যদিও বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

তিনি গতকালকে বলেন, ‘যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের প্রয়োজন আছে বলেই তা করা হয়েছে। ডে লেবারকে (দিনমজুর) দিয়ে বিমানে কাজ করানো যাবে না। যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন তাদেরও ন্যূনতম একটা যোগ্যতা থাকতে হয়। প্রকৌশলীরা এখানে এসেই কাজ করতে পারেন না। তাদের বাস্তবতা জানতে হয়। যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের পেছনে বিমানের বিনিয়োগ আছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা যদি অক্ষম না হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের কাজে লাগাতে কোনো সমস্যা নেই।’ তিনি বলেন, ‘বিমান এসব পদে যাদের রিক্রুট (নিয়োগ) করছে তাদের দক্ষ হতে যে সময়টা লাগবে সেই অন্তর্বর্তীকাল পর্যন্ত চাকরি থেকে যারা অবসরে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিমান যে পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছে তার প্রমাণ হচ্ছে এ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।’

বিমান গত বৃহস্পতিবার গ্রাউন্ড সার্ভিস ইক্যুইপমেন্ট (জিএসই) বিভাগের তিন কো-ট্রাক্টর চালককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করার কথা জানিয়েছে। এর আগে ১৫ জুন অনুষ্ঠিত পর্যদ সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন মো. শাজাহান আলী, আবুল কালাম আজাদ এবং মো. মীর কামাল। তারা সবাই জুনিয়র অফিসার (অপারেশন)। এ তিনজনই ছোট আকারের ট্রাক্টর দিয়ে মালামাল এয়ারক্রাফটে নিয়ে যান বা সেখান থেকে বন্দরের ব্যাগেজ বেল্টে পৌঁছে দেন। তাদের মধ্যে শাজাহান আলী ৩১ মে অবসরে যান। আবুল কালাম আজাদ ৩১ জুলাই এবং মীর কামাল ২৯ সেপ্টেম্বর অবসরে যাবেন। অবসরে যাওয়ার পর দিন থেকে  তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কার্যকর হবে। নিয়োগপ্রাপ্তরা এক বছরের জন্য তাদের চাকরিকালীন সর্বশেষ বেতন-ভাতার সমপরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে পাবেন।  

একই দিন প্রকৌশল বিভাগের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন, জুনিয়র টেকনিশিয়ান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আমিন, এয়ারক্রাফট মেকানিক মো. আলমগীর চৌধুরী, জুনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. রুস্তম আলী, এয়ারক্রাফট মেকানিক মো. আনিসুর রহমান, জুনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মো. আজহারুল হক সিদ্দিক ও এম নুরুল আলম, জুনিয়র টেকনিশিয়ান মো. আবদুস সামাদ, এএম প্ল্যানিং মো. নজরুল ইসলাম, ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট অফিসার মো. আরিফুর রহমান এবং এয়ারক্রাফট মেকানিক মো. আমিনুল ইসলাম। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার এই ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনো পর্যন্ত অবসরে যাননি। তাদের মধ্যে মো. মনিরুল ইসলাম আগামী জুলাই মাসে, রবিউল আমিন ও মো. আলমগীর চৌধুরী আগস্টে, রুস্তম আলী ও মো. আনিসুর রহমান অক্টোবরে এবং বাকি ৬ জন ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন।

বিমানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা এমন কী গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হয়ে গেছেন যাদের চাকরি যাওয়ার আগেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে? এসময় আরও কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে যাচ্ছেন। তাদের কেন বিবেচনায় আনা হলো না। যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আওতায় আনা হচ্ছে তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে টাকা-পয়সা লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।

 

এর আগে ২৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই গত ১৩ মার্চ চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, প্রকৌশল কর্মকর্তা কেবিএম রফিকুল ইসলাম বুলবুল ও মো. মোখলেছুর রহমান, জেটিও মো. মাহবুবুল ইসলাম, মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও মো. মাহফুজুর রহমান রয়েছেন।

বিমানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবসরগামী এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সিনিয়র হওয়ার কারণে এখনই কোনো কাজ করতে চান না। তারা অফিসে এসে আলস্যে সময় কাটান। অনেকের সময় কাটে পত্রিকা পড়ে, মোবাইল ফোনে কথা বলে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকে এয়ারক্রাফটের শিডিউল তৈরি করেন। কিছু কর্মকর্তা প্রকিউরমেন্ট বা কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত। যারা কেনাকাটা করেন, শিডিউল করেন তাদের কেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। এসব কাজ যে কেউই করতে পারবে। অথচ আমরা যতটা জানি তাতে সরকারের নীতি হচ্ছে, যে কাজের জন্য বিকল্প কোনো ব্যক্তি গড়ে ওঠেনি কেবল সেসব পদেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। বিমানে যাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের প্রতিটি পদেই বিকল্প জনবল রয়েছে বলে কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন।

বর্তমান এমডি মোস্তফা কামাল বিমানে স্বচ্ছতা আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করলেও একটি সিন্ডিকেটের কারণে তিনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে কথা উঠেছে। বিমানে জনবল নিয়োগে এখনো নানা প্রশ্ন ওঠে। সেটা অস্থায়ী নিয়োগ থেকে শুরু করে স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে জানা গেছে।

হজ এলেই বিমানে ৮৯ দিনের জন্য জনবল নিয়োগের হিড়িক পড়ে। এবারও পড়েছিল। প্রথম দফায় ৯৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরে আরও ১০০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করা হয়। প্রথমে অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ হলেও তাদের ধীরে ধীরে মূল জনবল কাঠামোতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

এর আগে মাত্র ৮৯ দিনের জন্য সম্পূর্ণ অস্থায়ী ক্যাজুয়াল ট্রাফিক হেল্পার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় বিমান। যোগ্যতা চাওয়া হয় এসএসসি বা সমমান পাস। কর্মঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রার্থীদের গত ২০ মে তারিখে এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টারে নির্ধারিত ফরমে আবেদনপত্রসহ ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়।

জাতীয় পরিচয়পত্রের অথবা জন্মসনদের মূল কপি, এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মূল সনদ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান 

অর্থমন্ত্রী থাকাকালে প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, অবসরের পরে চাকরির মেয়াদ বাড়ালে কর্মকর্তাদেরও অসুবিধা হয়। কারণ তখন তাদের কোনো দলের সদস্য বলে অপবাদ দেওয়া সহজ হয়। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের অবসরান্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য নীতিমালা করার তাগিদ দিতে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন।

ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে তাদের চুক্তিভিত্তিক চাকরি পরিহার করতে হবে। আগে তারা ৫৭ বছরেই চাকরি থেকে অবসরে যেতেন। ২০১১ সালে সেটা বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়েছে। তার পরও কেন তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চাই? সরকারকে তার পরও কিছু ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়। এ কারণেই আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা করার। কী ধরনের জনবল ছয় মাস বা এক বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন; তাদের স্থলে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরকারের দরকার; যে পদে বা ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে অবসরের পরও সরকার ব্যবহার করতে চায়Ñতাদের ক্যাডারবহির্ভূত বিশেষ পদে নিয়োগ করার পরামর্শ দেন প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী। বিশেষ পদ বলতে তিনি তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বা উপদেষ্টা পরিষদে নিযুক্তিকে বুঝিয়েছেন। এ ছাড়া আরও একটি সিদ্ধান্ত তিনি নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, কোনো ব্যক্তিকে সরকারি চাকরিতে কত বছর পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হবে, তাও ঠিক করা দরকার। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এসব প্রস্তাব ‘নথিজাত’ করে রেখেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039010047912598