বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের চিন্তা, বাতিল হতে পারে তৃতীয় পরীক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের চিন্তা, বাতিল হতে পারে তৃতীয় পরীক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। বর্তমানে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র দুজন পরীক্ষক মূল্যায়ন করে থাকেন। উভয় পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরে ২০ পার্থক্য হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে উত্তরপত্র ফের মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এই পদ্ধতির কারণে বিসিএসের ফল ঝুলে যাচ্ছে। চলতি ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় আট হাজারের বেশি উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হয়েছে। এর ফলে লিখিত পরীক্ষার ফল অন্তত এক মাস পিছিয়ে যায়। এ কারণে তৃতীয় পরীক্ষকের বিধান তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে পিএসসি। এ ছাড়া সর্বোচ্চ মেধাবীদের নিয়োগ দিতে গোটা বাছাই পদ্ধতি সংস্কারের চিন্তাও চলছে।

এদিকে ৪৩তম বিসিএসে আবেদনের সময় দুই মাস বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়ে পিএসসিকে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও পরীক্ষা বন্ধ আছে। পাশাপাশি ঝুলে গেছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এটি শেষ করতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবেদনের সময় ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়াতে চিঠি দেওয়া হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কথা আছে। প্রতি বিসিএসে গড়ে চার লাখের বেশি উচ্চশিক্ষিত যুবক আবেদন করে থাকে।

১৮ জানুয়ারি আলাপকালে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, আমরা প্রতিবছর একটি বিসিএসের সার্কুলার দিয়ে এক বছরের মধ্যেই সব কার্যক্রম শেষ করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাঠাতে চাই। এ জন্য ৪৩তম বিসিএসের ব্যাপারে রোডম্যাপ করে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এক বছরের মধ্যেই আবেদনকারীদের মধ্য থেকে বাছাইকৃতরা সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। তবে যদি আবেদনের সময় বাড়াতে হয় তাহলে বর্ধিত সময়টাও রোডম্যাপে নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। বিসিএস পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা কমাতে আমরা তৃতীয় পরীক্ষকের বিধান তুলে দেওয়া সমীচীন বলে মনে করছি। তবে এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা যায়, ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসির মধ্যস্থতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের একটি বৈঠক হয়। এতে করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা নিতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত স্নাতকদের সুবিধা দিতে বিসিএসে আবেদনের সময় বাড়ানোর পরামর্শ আসে। অংশগ্রহণকারীরা সময় বাড়ানোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে পিএসসিকে চিঠি দিতে পরামর্শ দেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রায় এক মাস আগের এক বৈঠকে পিএসসিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তাদেরকে আমরা ‘অ্যাপিয়ার্ড’ (পরীক্ষায় অবতীর্ণ) সনদ দিচ্ছি। আশা করছি, এটি বিবেচিত হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের কোনো সমস্যা হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরই পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। বিশেষ করে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা পরীক্ষা শুরু করেছি। ছাত্রছাত্রীরা চ্যালেঞ্জের মুখেও পরীক্ষা দিচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণে যেহেতু তারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাই তাদের জন্য অভিভাবক হিসেবে আমাদের করণীয় আছে। বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে পিএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

সর্বশেষ পিএসসি একসঙ্গে দুটি বিসিএসের সার্কুলার দিয়েছে। এর মধ্যে ৪২তম (বিশেষ) বিসিএসে প্রায় দুই হাজার ডাক্তার এবং ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের মাধ্যমে এক হাজার ৮১৪ জন নিয়োগ করা হবে।

লিখিত শেষ হলেই সুযোগ : পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর সব কোর্সের বা বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেই আমরা তাকে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করব। ব্যাবহারিক বা ল্যাব ওয়ার্ক শেষ না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিতে পারবে। আমরা তা বিবেচনা করব।

তিনি বলেন, জনগণের সুবিধার দেখার জন্যই এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর বিসিএসের সার্কুলার দেওয়ার অংশ হিসাবে এবং প্রার্থীদের বয়সের কথা বিবেচনা করেই নির্ধারিত সময়ে সার্কুলার প্রকাশ করা হয়েছে। দেরি হলে হয়তো অনেকের মধ্যে ক্ষোভ ও কষ্ট থাকত। সেদিকটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

তদবিরে লাভ হবে না : পিএসসির নবনিযুক্ত এই চেয়ারম্যান বলেন, প্রার্থী তথা জনগণের একটি তথ্য জানা প্রয়োজন। সেটি হলো, কোনো প্রার্থীকে আলাদাভাবে দেখার বা বিবেচনার সুযোগ নেই। কেননা, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রার্থীর আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফল প্রকাশের কাজ করা হয়। পরীক্ষার হলেই উত্তরপত্র শনাক্তবিহীন করা হয়ে থাকে। উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষে কালিতে ঢেকে দেওয়া নম্বর মেশিন পাঠ করে প্রার্থী শনাক্ত করে। এরপর তার রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিপরীতে প্রাপ্ত নম্বর যুক্ত হয়। অন্যদিকে ভাইভা পরীক্ষার দিন সকালে ৩০-৩৫ মিনিট আগে বোর্ড চেয়ারম্যানদের হাতে সিলগালা করা প্রার্থী তালিকা তুলে দেওয়া হয়। বোর্ডসংখ্যা ধরে প্যাকেট সংখ্যা তৈরি হয়।

কারও পক্ষে বেছে প্যাকেট নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কেউই জানছেন না, কে কার বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন। আর বোর্ডের সদস্যদের জানার তো কোনো সুযোগই নেই। তদবিরে কোনো লাভ হবে না, হয় না। এ জন্য ১১ বছর ধরে সংস্থার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। বছর বছর আবেদনকারীর বর্ধিত সংখ্যাই এটা প্রমাণ করে। সুতরাং শতভাগ নির্মোহভাবে মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশ করা হয়। প্রার্থীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, লেখাপড়া আর জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037600994110107