ভর্তির যোগ্যতা বৃদ্ধিতে লাভবান হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভর্তির যোগ্যতা বৃদ্ধিতে লাভবান হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির যোগ্যতা গত কয়েক বছরের থেকে বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আবেদনের যোগত্য বাড়ানোয় পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত প্রান্তিক পর্যায়ের কলেজগুলো। তাই সারাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করায় অপেক্ষাকৃত কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হবে। তাই সারাদেশের অনার্স অধিভুক্ত কলেজগুলো পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাবে না। এতে কলেজ পরিচালনার টাকা উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, অনার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে এ পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা দেয় কলেজগুলো। তাই যোগ্যতা বৃদ্ধি করায় শিক্ষার্থী কমলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রান্তিক পর্যায়ের কলেজগুলোর অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।

যদিও রাজধানীর কোনো কোনো স্বনামধন্য কলেজের অধ্যক্ষ বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার মান বাড়বে। প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষকরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাও মেনে নিয়েছেন তারা। তাদের মতে, এক লাফে যোগ্যতা এতো না বাড়িয়ে কিছুটা কম বাড়ালে ভালো হতো।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেছেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষিত বেকার তৈরি বন্ধ করতে ভর্তির যোগ্যতা বাড়ানো হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী আগে কম জিপিএ নিয়ে ভর্তি হতো তাদের সংখ্যা খুবই কম। আর তারা ডিগ্রিসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাবেন।

রোববার থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। নতুন নিয়মে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসএসসিতে জিপিএ ৩ দশমিক ৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৩ পেয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই নূন্যতম জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে। কিন্তু গত বছরও (২০২১ খ্রিষ্টাব্দে) বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে একজন শিক্ষার্থী এসএসসিতে জিপিএ ৩ ও এইচএসসিতে জিপিএ ২ দশমিক ৫ পেয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারতেন। আর মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসএসসিতে জিপিএ ২ দশমিক ৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ২ দশমিক ৫ পেয়ে ভর্তির আবেদন করতে পারতেন। চলতি বছর সে যোগ্যতা বাড়ানো হয়।

সারা দেশের অনার্স মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে তাদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, উচ্চ শিক্ষা সবার অধিকার। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স পর্যায়ে ভর্তির যোগ্যতা বাড়ানোয় প্রান্তিক পর্যায়ের কলেজগুলো ভোগান্তিতে পড়বে। তারা কাঙ্খিত হারে শিক্ষার্থী পাবে না। বেশিরভাগ অনার্স মাস্টার্স কলেজ শিক্ষকদের বেতন দেয় না। যেসব কলেজ একটু শিক্ষার্থী পায় তারা হয়তো কিছুটা বেতন দেন। যোগ্যতা বাড়ানোয় প্রান্তিক যে কলেজগুলো শিক্ষার্থী পেতো তাদের শিক্ষার্থীও কমবে। এতে হাতেগোনা যে কয়েকটি কলেজ শিক্ষকদের বেতন দেয় তাও বন্ধ হয়ে যাবে। 

এদিকে যোগ্যতা বাড়ানোয় রাজধানীর প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর মোহম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, যোগ্যতা এক লাফে এতো বাড়ানোয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হবে শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থী কমবে। কলেজ পরিচলানার খরচ না উঠলে প্রান্তিক পর্যায়ের কলেজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকার কলেজগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বাড়বে। 

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এ যোগ্যতা কিছুটা কমানো উচিত। আমি ভিসি সাহেব কেউ সিদ্ধান্ত রিভাইজ করার বিষয়ে বলবো।

এদিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ জুলহাস উদ্দিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, যোগ্যতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এতে শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এক লাফে বেশি না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে বাড়ানো যেতো। এতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কম শিক্ষার্থী পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও প্রান্তিক পর্যায়ের কলেজগুলো পরিচালনার খরচ যোগাতে কিছুটা জটিলতায় পড়তে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্যতা বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ঠিক আছে। 

দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে ভর্তির যোগ্যতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা যতটুকু জিপিএ বাড়িয়েছি, বা জিপিএ বাড়ানোর পর যে ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাবেন না তাদের সংখ্যা খুব কম। প্রতিবছর কয়েকলাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ওই ক্যাটাগরি বা ওই জিপিএ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী ভর্তি হয় কয়েক হাজার। আর তদের ভর্তির জন্য ডিগ্রিসহ বিভিন্ন কোর্স আছে, তারা সেগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন। 

শিক্ষকদের শঙ্কা নিয়ে উপাচার্য আরও বলেন, কলেজগুলো শিক্ষকদের বেতন দেয়ার কথা বললেও তাদের বেতন দিতে চায় না। এ জন্য শিক্ষকদের রাস্তায় এসে আন্দোলন করতে হয়। তারা যদি বেতন দিতেন শিক্ষকরা আন্দোলনে আসতেন না। আর আন্দোলনের ভয়ে উচ্চশিক্ষার মান কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065679550170898