মন্ত্রণালয়ের অস্বীকার : শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে দেননি আমলারা - দৈনিকশিক্ষা

মন্ত্রণালয়ের অস্বীকার : শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে দেননি আমলারা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পাঁচ বছর আগে জাতীয়করণ হলেও অদ্যাবধি এর সুফল পাননি শিক্ষকরা। এর জেরে গতকাল শুক্রবার নতুন সরকারি হওয়া কলেজের শিক্ষকরা আত্তীকরণের দাবিতে ঢাকায় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন। অনুমতি থাকার পরও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমলারা পুলিশের সাহায্যে গতকাল শিক্ষকদের রাস্তায়ই নামতে দেননি। এর ফলে শিক্ষকরা সভা করতে না পেরে একটি বিবৃতি দিয়ে বাড়ি ফিরে যান। শিক্ষকরা বলেছেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সরকারিকরণ হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাজ শেষ করতে হবে। নতুবা ১ জুলাই থেকে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তবে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তর শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে না দেয়ার ঘটনাটিকে অস্বীকার করেছে। শনিবার (১২ মার্চ) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেসব উপজেলায় একটিও সরকারি কলেজ নেই সেসব উপজেলায় একটি করে কলেজকে জাতীয়করণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে সরকারি ঘোষণা দেয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের কাজ শুরু হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাতে ঢিলেমি দেখান। পরিদর্শনসহ নানা ছুঁতোয় তাদের কাজ দিনের পর দিন ফেলে রাখেন। এতে ভোগান্তি বাড়ে এসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অদক্ষ কর্মকর্তা ও শীর্ষ পর্যায়ের ঢিলেঢালা নির্দেশনার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা গতকাল সভা করতে চান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মু. ফজলুর রহমানের নির্দেশে শিক্ষকদের পুলিশ ভয় দেখাতে শুরু করে বলে অভিযোগ ওঠে।

জানতে চাইলে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, পূর্ণ প্রস্তুতি থাকার পরেও আমরা সভা করতে পারিনি। পরে একটি বিবৃতি দিয়ে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছি। কেন সভা করতে পারেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্যারের কথায় আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি। শিক্ষকদের বাধা দেয়ার কথা অস্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মু. ফজলুর রহমান বলেন, কে সভা করবে, আর কে করবে না- এটা তাদের বিষয়। আমরা কাউকে সভা করতে বাধা দেইনি। শিক্ষকদের আত্তীকরণের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, কাজটি শেষ হতে ঠিক কত দিন সময় লাগবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। যাচাই-বাছাই করে ফাইল প্রস্তুত করতে একটু সময় লাগবে। ঢাকার রমনা জোনের পুলিশের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান  বলেন, অনুমতি না থাকায় শিক্ষকদের সভা করতে দেয়া হয়নি। কোনো শিক্ষককে ভয় দেখানোর প্রশ্নই ওঠে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তর থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি, যার কারণে শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে পারবেন না। মূলত শিক্ষকদের এই সভার খবর মাননীয় মন্ত্রীর দপ্তর জানেই না। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকার ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ওই সব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতদিন শিক্ষা, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু কোনো সুফল না আসায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ভোগান্তি নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি আত্তীকরণ প্রক্রিয়া ‘নিষ্পত্তি’ করার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এই প্রক্রিয়া একসঙ্গে নয়, ধাপে ধাপে নিষ্পত্তি করা হবে।

জাতীয়করণ হওয়া কলেজগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ৩২৪টি কলেজে ১৮ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী ছিল। তাদের মধ্যে ১২ হাজার ৮৬৫ জন এমপিওভুক্ত ছিলেন। কিন্তু সরকারি বেতন-ভাতা পাওয়ার আগেই প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে চলে যেতে হয়েছে। বাকি শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, কারো কারো পদাবনতি ঘটতে যাচ্ছে।

জাতীয়করণ ঘোষণার পর থেকে কলেজগুলোতে জনবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ১৭৮টি কলেজে অধ্যক্ষই নেই। ৩৮টি কলেজে অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে শিক্ষা ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবার অনেক কলেজে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকও নেই। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের নামে এভাবে পুরো প্রক্রিয়াকেই হ য ব র ল অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।

তিনি মনে করেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ জটিলতার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও গাফিলতিই দায়ী। আত্তীকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০টি কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের কাজও খুব একটা এগুচ্ছে না বলে দাবি জহুরুল ইসলামের।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011665105819702