নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর অধিকাংশই প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কমিটি তদন্ত শেষে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নোবিপ্রবির সাবেক এ উপাচার্য যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ না করলেও যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দিয়েছেন, যখন ইচ্ছা পদোন্নতি দিয়েছেন। রোববার (১ আগস্ট) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছন সাইফ সুজন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে এম অহিদুজ্জামানের মেয়াদকালে নোবিপ্রবিতে অনিয়ম করে নিয়োগ ও পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। অনিয়ম করে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের একজন নোবিপ্রবি বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুবোধ কুমার। বিভাগের নেতৃত্বে থাকা এ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রায় প্রতিটি ধাপই সম্পন্ন হয়েছে কোনো না কোনো অনিয়মে ভর করে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী অধ্যাপক পদে চাকরির জন্য আবেদন করেন তিনি। তবে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি তিনি। অ্যাডহক ভিত্তিতে যোগদানের আবেদন করেন তিনি। অদৃশ্য কারণে আবেদনের দিনই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান ড. সুবোধ। এরপর সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের বাছাই বোর্ডে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হওয়ার পরও শিক্ষকতা ছাড়তে হয়নি তাকে। উল্টো আরেক ধাপ এগিয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
নোবিপ্রবির আরেকজন শিক্ষক অধ্যাপক গাজী মো. মহসীন। আগে শিক্ষকতার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহযোগী অধ্যাপক পদে যোগ দেন তিনি। নিয়োগের মতো পদোন্নতির ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন সুবিধা পান তিনি। সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের দুই বছরের মাথায় অধ্যাপক বনে যান তিনি। একইভাবে ড. মো. রোকনুজ্জামান সিদ্দিকী, মো. আতিকুর রহমান ভূঁইয়া, মো. মোকাম্মেল করিমসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে অনিয়ম করে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হয়।
কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও এম অহিদুজ্জামানের স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এমনই একজন কর্মকর্তা ডা. লোপা দাস। তিনি মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদানের ১ বছর ৮ মাসের মাথায় সিনিয়র মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পান। যদিও এ পদে নিয়োগের জন্য পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। একইভাবে ইউজিসির ওই তদন্ত প্রতিবেদনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ইশমত আরা পারভীন, এএইচএম নিজাম উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে অনিয়ম বিষয়ে অহিদুজ্জামানের ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে। জবাবে বেশির ভাগ অভিযোগকেই মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেন সাবেক এ উপাচার্য। তিনি কমিটিকে জানান, সব নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধি ও সময় অনুসরণ করে দেয়া হয়েছে।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নোবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদারুল আলম বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পেয়েছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা তদন্ত কমিটিরও শিগগিরই তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে, নোবিপ্রবির শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে যে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়, তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড অনুসরণ করে না। ইউজিসির নীতিমালার আলোকে জরুরি ভিত্তিতে ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে সামনের নিয়োগ কার্যক্রমে সেটি অনুসরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যোগ্যতা শিথিল করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের পূর্ববর্তী পদের সমপরিমাণ চাকরি ও বর্তমান পদের মেয়াদকাল বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদোন্নয়ন বা পদোন্নতি দেয়া যেতে পারে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ববর্তী সব পরীক্ষার ফল বিবেচনায় না নিয়ে অগ্রাধিকার ও শর্ত শিথিলের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা কাম্য নয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, নোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্যের মেয়াদকালের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করার স্বার্থে আমরা নথিপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্কার নিয়েছি। নথিপত্র ও বক্তব্য বিশ্লেষণে বিভিন্ন অনিয়ম প্রমাণিত হয়। সে আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশও করা হয়েছে। কিছু অভিযোগ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন হওয়ায় সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।