রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য বিকৃত: অনুমতি ছাড়াই সরকারের স্বার্থবিরোধী আপিল! - দৈনিকশিক্ষা

রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য বিকৃত: অনুমতি ছাড়াই সরকারের স্বার্থবিরোধী আপিল!

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য বিকৃত করার অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। সরকারের পক্ষে যাওয়ায় ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু সংস্কৃতি সচিবের অনুমতি ছাড়াই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে একটি লিভ টু আপিল করা হয়েছে। সরকারের নাম ভাঙিয়ে করা এই আপিল ইতোমধ্যে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে  সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের স্বার্থবিরোধী এই আপিল দায়েরের পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য রক্ষায় জনস্বার্থে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

জানা যায়, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাদপুর উপজেলা ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সুতা ব্যবসায়ীর সংগঠন) ৬৫ জন সদস্য কাছারি বাড়ির দক্ষিণ পাশে ৬৫ শতাংশ জমি কেনেন। কাছারি বাড়ির দক্ষিণ সীমানাপ্রাচীরের মাত্র ১০ ফুট দূরে বহুতল ভবন তৈরি শুরু করে। প্রথমে তারা পুরো জায়গায় একতলা ভবনের একটি বিপণিবিতান নির্মাণ করেন। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্যবসায়ীরা ওই ভবনের ওপর দ্বিতীয় তলার কাজ শুরু করেন। শাহজাদপুর কাছারি বাড়ি ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে কাছারি বাড়িটি বিশ্বকবি রবীন্দ্র স্মৃতিজাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পর্যায়ক্রমে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে অত্যাধুনিক মিলনায়তন, সীমানাপ্রাচীর, শৌচাগার, অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক, বাগান নির্মাণসহ নানা সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ করে। পুরাকীর্তি আইনের ১২ (৩) এবং ১৯ (চ) ও (২) ধারা অনুযায়ী, সংরক্ষিত পুরাকীর্তির কাছে কোনো ভবন নির্মাণ, সৌন্দর্যহানি বা কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন আইনত দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইভাবে এ নির্মাণ বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ ও ২৪ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। এ কথা জানিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য নোটিশ দিলে নির্মাতারা কাজ বন্ধ করে দেন। এর এক বছর পর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ওই ব্যবসায়ীরা আবার ভবন সম্প্রসারণের কাজ শুরু করলে একইভাবে নোটিশ দিলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে  ফের বহুতল ভবন নির্মাণে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে। প্রায় পাঁচতলা পর্যন্ত ছাদের ঢালাইয়ের কাজ পর্যন্ত শেষ করা হয়। কাজ শুরুর পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা একাধিকবার নোটিশ দিলেও তারা তা উপেক্ষা করেই কাজ চালিয়ে যান।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পরিবেশ ও মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে হাইকোর্টে রিট করে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে একই বছরের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করে বহুতল ভবন নির্মাণকাজের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন। পরে গত বছরের ১৯ জুলাই এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে কাছারি বাড়ির সৌন্দর্য রক্ষায় তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদালতের দেওয়া নির্দেশনাগুলো হলো ১. ডিজি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে (বিবাদী নম্বর-২) শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি, সিরাজগঞ্জের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সৌন্দর্য বিকৃত করে এমন কোনো ভবন/স্থাপনা আছে কি না, তা তদন্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। ২. তদন্তে শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও সৌন্দর্য বিকৃত করে এমন কোনো ভবন/স্থাপনা পাওয়া যায়, তবে সেসব ভবন/স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ৩. শাহজাদপুর রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও পবিত্রতা রক্ষার্থে ডিজি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিকটস্থ জমি ও ভবনের ব্যাপারে যথাযথ ও উপযুক্ত ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে গ্রহণ করতে পারবে।

এ রায় সরকারের পক্ষে যাওয়ায় কোনো আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু সরকারের অগোচরে একটি লিভ টু আপিল করা হয়েছে। এই লিভ টু আপিল প্রত্যাহারের জন্য গত ৪ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সংসদ ও আইন) শারাবান তাহুরা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই লিভ টু আপিল প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হরিদাস পালের স্বাক্ষরবিহীন পত্রটি সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ১৩৮/২৪ সংক্রান্ত। এই আপিলটি সরকারপক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় অথবা রিটকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে করা হয়নি। চিঠিতে সরকার পক্ষে রায় প্রদান করা হয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ওই রায়ের আদেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় কোনো পক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে পক্ষ করে লিভ টু আপিল ১৩৮/২৪ দায়ের করেছে।

জানতে চাওয়া হলে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হরিদাস পাল গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, আমি নিজের ইচ্ছায় কোনো আপিল করতে পারি না। হয় সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে অথবা আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং থেকে আমাকে নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী আমি ফাইল করি। তবে কাছারি বাড়ির লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশনা অ্যাটর্নি জেনারেল দিয়েছেন নাকি সলিসিটর উইং থেকে দেওয়া হয়েছে, তা আমি ফাইল না দেখে নিশ্চিত করে এখন বলতে পারব না।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, আগে থেকেই সরকারের সলিসিটর উইংয়ের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এবার সরকারের স্বার্থের বিরুদ্ধে আপিল করার মধ্য দিয়ে সেই অভিযোগের সত্যতা পেলাম। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির রায় সরকারের চাহিদামতো হয়েছে। কিন্তু সচিব জানেন না অথচ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হয়েছে। যিনি এটি করেছেন, তিনি সরকারের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। তদন্ত করে এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030648708343506