বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত একজন সরকারি কলেজ শিক্ষককে মারধর করেছেন শরীয়তপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারি। বুধবার (৩০ মার্চ) বেলা পৌনে ৩টার দিকে কলেজের বাংলা বিভাগে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের নাম বিএম সোহেল। তিনি ওই কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। ৩৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনি।
এই ঘটনায় ফৌজদারি মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যদিও মামলা নিতে গড়িমসি করছে থানা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানায়, কলেজের উপাধ্যক্ষের ইন্ধনে এই শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছে ছাত্রলীগ নেতা। এই উপাধ্যক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন বিতর্কিত পরিচালকের ‘লোক’ হিসেবে ক্যাডারে পরিচিত।
জানা গেছে, বুধবার বাংলা বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা চলছিল। এ সময় হঠাৎ করেই সেখানে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারি ২০-২৫ জন নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত হন। এসময় তিনি বিএম সোহেলকে তাদের কেন দাওয়াত দেয়া হয়নি সেটি জানতে চান। ভুক্তভোগী শিক্ষক এ বিষয়ে কথা বলতে বিভাগের জ্যেষ্ঠ এক শিক্ষককে ডেকে আনার কথা বললে সোহাগ ওই শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে লাথি মারেন।
অভিযুক্ত সোহাগ বেপারির সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের যোগাযোগ রয়েছে বলে কলেজের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে সোহাগের সাথে যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রভাষক সোহেল ব্যাপারিকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি উভয় পক্ষকে ডেকে আনি। পরে সবার সামনে সোহাগ বেপারি শিক্ষক সোহেলের পা ধরে ক্ষমা চান। এরপর বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় আমাদের কাছে নানা দাবি নিয়ে আসেন। এর প্রেক্ষিতে তাদের সাথে আমরা কথা বলি। এর বাইরে কারো সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। সোহাগের সাথেও আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বিএম সোহেল বলেন, আমাদের বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভাইভা চলছিল। কোনো কারণ ছাড়াই সোহাগ বেপারি আমাকে মারধর করেছে। কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কার কাছে অভিযোগ দেব? অভিযোগের কোনো প্রতিকার পাব না। সেজন্য কোনো অভিযোগ দাখিল করিনি।
শিক্ষককে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ বলেন বাংলা বিভাগে হট্টগোল হয়েছে সেটি শুনেছি। তবে শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে সেটি জানা নেই। অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় ঘটনাটি মীমাংসা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ফৌজদারি মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে, দৈনিক শিক্ষায় পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে অধ্যক্ষ সাফাই গেয়েছেন উপাধ্যক্ষের। উপাধ্যক্ষের পক্ষে তিনি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহাগ বেপারির মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তা রিসিভ হয়নি।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম-পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
৩৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুনক কবির শুক্রবার দৈনিক শিক্ষাড্টকমকে বলেন, অধ্যক্ষের ভূমিকা রহস্যজনক। মামলা না নেয়া দু:খজনক। সংগঠনের পক্ষ থেকে ফেসবুক গ্রুপে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, কোনও গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠাননি তারা।