গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার সরকারি, বেসরকারি ২৭৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করার কোনো পরিকল্পনা সংশ্নিষ্ট শিক্ষা বিভাগের আছে কিনা, তাও জানা যায়নি।
উপজেলায় শহীদ মিনারশূন্য এই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯২টি এবং স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের সংখ্যা ৮২টি। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার, উপজেলার ৪১টি মাদ্রাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই। তাই সব মিলিয়ে এবারও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী (করোনাকালীন ছুটির পর বিদ্যালয় খুললে) নিজ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের অভাবে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাদুল্যাপুর উপজেলায় নব্য-জাতীয়করণসহ ১৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়গুলোর ৩মধ্যে শুধু সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে শহীদ মিনার। আর বাদবাকি ১৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো শহীদ মিনার। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে শহীদ মিনারশূন্য অবস্থায় রয়েছে বিদ্যালয়গুলো। একইভাবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, সাদুল্যাপুর উপজেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১২১টি। এর মধ্যে স্কুল ৬৬টি, মাদ্রাসা ৪১টি আর কলেজ ১৪টি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শহীদ মিনার আছে আটটি কলেজ এবং ৩১টি স্কুলে। এখানকার কোনো মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই। সব মিলিয়ে তাদের ৩৯টি স্কুল ও কলেজে শহীদ মিনার আছে।
শিক্ষানুরাগী আশরাফ হোসেন বাবলু বলেন, একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে 'নিজস্ব পরিচালনা কমিটি' দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিছু সরকারি কর্মকর্তা। সেই সময়ে লাখ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বলে গোটা এলাকায় প্রচার রয়েছে। কিন্তু এত বিশাল পরিমাণের টাকা নিয়েও এসব কমিটির লোকজন বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে যেতে পারেননি। অথচ আমাদের দেশের ইতিহাসে শহীদ মিনার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষণীয় একটি বিষয়। এমন কমিটি যেন আর কোনো বিদ্যালয়ে না থাকে সে বিষয়টি সরকারকে দেখতে হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিশ শাফি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করার মতো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। আর বরাদ্দ না পেলে আমরা কীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেব। তবে শিশু শিক্ষার্থীদের ইতিহাস সচেতন করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি। এ কাজে স্থানীয় সুধীজন কিংবা বিত্তশালীদের এগিয়ে এলে ভালো হয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মনিরুল হাসান জানান, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে শহীদ মিনার থাকাটা জরুরি। কিন্তু শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সংশ্নিষ্ট কাজ দেখে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আমরা বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। পাশাপাশি এসব বিদ্যালয়ের প্রধান ও পরিচালনা কমিটিকেও বিষয়টি জানানো হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল হাসান রনি জানান, সরকারিভাবে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো নির্দেশনা থাকে না। নির্দেশনা পেলেই তারা দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেবেন। সেক্ষেত্রে সরকারিভাবে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম জানান, বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় ভাষার মাসে অত্যন্ত সমস্যায় পড়তে হয়। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় খোলা থাকলে এবারও একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। ইউএনও নবীনেওয়াজ জানান, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় বিত্তশালীরাও এগিয়ে আসতে পারেন।