শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের উপর কোনও ধরনের চাপ সৃষ্টি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধার আলোকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যয়ন পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কিংবা সমস্যার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক সুযোগ সৃষ্টি করা হবে যেন মূল্যয়ন পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারে।’ সোমবার (২ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে মত বিনিময়কালে এ কথা বলেন উপাচার্য।
উপাচার্য বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারাবিশ্ব থমকে গেছে। এসময়ে কোনও কিছুই নির্ধারিত নিয়মে হচ্ছে না। শিক্ষা কার্যক্রমও থেমে রয়েছে। এসময়ে আমরা অনলাইনে আমাদের দুই সেমিস্টার শেষ করেছি। উপস্থিতি শতভাগ ছিল না হয়তো ক্লাসে। তারপরও যেন সেশনজটে পড়ে শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের ভোগান্তিতে না পড়তে হয় সেজন্য আর্থিক সহায়তা, মোবাইলে ডাটা প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এমনকি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে সর্বোচ্চ সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অনলাইনে মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষ করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্ত আমরা দেখেছি, অনেক শিক্ষার্থীই অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় কোনও ধরনের সেশনজটে না পড়ুক। এজন্য আমরা আমাদের ক্লাস ও ফাইনাল পরীক্ষা ব্যতীত বাকি সকল প্রক্রিয়া অনলাইনে শেষ করে রাখতে চাই। এর প্রেক্ষিতে টার্মটেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজ কিংবা ভাইবা পরীক্ষার মাধ্যমে এ সকল প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রত্যেক বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছি। যাতে সুযোগ পেলেই আমরা স্বল্প ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবো।’
ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এখনও ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অনুসারেই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এসময় শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনে মূল্যয়ন পরীক্ষাতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান উপাচার্য।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬১ তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে করোনাকালীন সময়ের অসমাপ্ত দুই সেমিস্টারের ক্লাস ও ফাইনাল পরীক্ষা ব্যতীত বাকী সকল প্রক্রিয়া (টার্মটেস্ট, ক্লাস উপস্থিতি, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি) অনলাইনে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে কোনও শিক্ষার্থীর সমস্যা থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান করা ও প্রত্যেক কোর্স শিক্ষককে নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে ফাইনাল পরীক্ষা ব্যতীত টার্মটেস্ট পরীক্ষাসহ সকল প্রক্রিয়া অনলাইনে শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ইংরেজি বিভাগসহ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সকল শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ১৯ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়, যা অক্টোবর মাসের মধ্যে শেষ করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুসারে অনলাইনে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় প্রত্যেক বিভাগে। এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে এপ্রিল মাসে মাঝামাঝিতে অসমাপ্ত সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে অনলাইনে অসমাপ্ত সেমিস্টার ও চলমান সেমিস্টার শেষ হলেও টার্মটেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, সেমিস্টার ফাইনালসহ কোন ধরনের পরীক্ষায় হয়নি।