শিক্ষক নিয়োগে থাকছে না নিবন্ধন সনদ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক নিয়োগে থাকছে না নিবন্ধন সনদ

রুম্মান তূর্য |

 

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধন সনদ বা প্রত্যয়ন প্রথা উঠে যাচ্ছে। আগামীতে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের তালিকা করে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এ জন্য সংশোধন হচ্ছে আইন। সনদ বা প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া তুলে দেয়ায় বদলে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নামও। 

নতুন এ আইন মন্ত্রীপরিষদের অনুমোদন পেয়ে সংসদে পাস হয়ে এলে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আর সনদ দেয়া হবে না। তার বদলে উত্তীর্ণদের একটি তালিকা করা হবে। শিক্ষার অধিদপ্তরগুলো থেকে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করে সেসব পদে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আবেদন নেয়া হবে। আবেদনের প্রেক্ষিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নিয়োগ সুপারিশ পাবেন। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেবে। এনটিআরসিএ আইন ফের সংশোধন করে এসব প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শিক্ষা প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

 

জানা গেছে, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে যোগ্য প্রার্থীকে প্রত্যয়ন দিতে মূলত ওই আইনবলেই এনটিআরসিএ গঠিত। তবে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে এনটিআরসিএকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। সম্প্রতি এনটিআরসিএ আইন সংশোধন করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইনের একটি খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। খসড়াটি পর্যালোচনা করে কেবিনেট ডিভিশন আরো কিছু অংশ সংস্কারের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। খসড়া আইনে প্রার্থী বাছাইয়ের আইনি ক্ষমতা এনটিআরসিএকে দেয়ায় প্রত্যয়ন বা সনদ দেয়ার প্রক্রিয়া উঠিয়ে দেয়ার বিষয়টি এসেছে। আর শিক্ষক নিবন্ধনের সনদ বা প্রত্যয়নের বিষয়টি উঠিয়ে দেয়ায় ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের’ নামে কিছু সংস্কার আনার বিষয়টি উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনটিআরসিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভাও হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর ওই কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশোধিত খসড়ার বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ফের আইনের খসড়া করে তা কেবিনেটে পাঠানো হবে। এমনটাই আলোচনা হয়েছে ওই সভায়। 

কেবিনেটের পর্যবেক্ষণে খসড়ায় কী কী পরিবর্তন আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে আমরা এখন সনদ বা প্রত্যয়ন দিচ্ছি। তবে সংশোধিত আইনের খসড়ায় এনটিআরসিএকে শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাই বা নিয়োগ সুপারিশ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাই কেবিনেট ডিভিশন বলছে, প্রত্যয়ন না দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের মেধাতালিকা করে সেখান থেকে নিয়োগ সুপারিশ করার ব্যবস্থা করতে। পিএসসি যেভাবে নিয়োগ সুপারিশ করে, একই আদলে। নতুন খসড়াটি কেবিনেট হয়ে সংসদে পাস হয়ে এলে আর শিক্ষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন বা সনদ দেয়া হবে না। 

 

তিনি আরো বলেন, তবে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা হবে আগের মতোই। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও পরে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে সাবজেক্টের বিপরীতে নয়, পদের বিপরীতে নিবন্ধন করা হবে। এ ক্ষেত্রে যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদের একটি মেধাতালিকা হবে, আদলতেরও এমন একটি নির্দেশনা আছে। পরে অধিদপ্তরগুলো থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ওইসব পদে উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন নেয়া হবে ঠিক যেমনটি এখন হয়। তারা আবেদন করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে মেধা বা নম্বর অনুযায়ী নিয়োগ সুপারিশ পাবেন। তবে এখন যে নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে সনদ বা প্রত্যয়ন দেয়া হয় সেটি আর দেয়া হবে না। তাই কেবিনেটের পর্যবেক্ষণ, এনটিআরসিএর নাম সংশোধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নাম হবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও সুপারিশ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।  

তিনি বলেন, প্রত্যয়ন বা সনদ না দিলে সনদ জাল হওয়ার জটিলতা থাকবে না। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসরকারি পরিচালনা কমিটিই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে সরাসরি নিয়োগ দিতো আর এমপিওভুক্ত করতো মন্ত্রণালয়। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা করে প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী সনদ দেয়া শুরু হয়। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা বেসরকারি কমিটির হাতেই ছিলো। এনটিআরসিএর দেয়া নিবন্ধন পাস সনদ ছাড়া শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করা যেতো না। কিন্তু  ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এনটিআরসিএই এন্ট্রি লেভেলের প্রার্থী বাছাই করছে। তাই সনদের আর প্রয়োজন নেই। আর সনদ দিলে তা নিয়ে প্রার্থীরা বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে মামলা করেন। এনটিআরসিএ কোনো কোনো সনদ দিয়েছে কয়েক বছরের, কোনো কোনো সনদ দিয়েছে আজীবন মেয়াদের। সব বিধিমোতাবেক হলেও আদালতে গিয়ে এক একজন প্রার্থী এক একেক রকম ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। তাই সনদ প্রথা বাদ হলে আইনি জটিলতাও কমবে। 

১৮তম নিবন্ধন থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে কী-না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা পদের ভিত্তিতে ১৮তম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করবো। আইন সংশোধন দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কেবিনেট হয়ে তা সংসদে গিয়ে পাস হবে। প্রচলিত নিয়মেই ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তবে প্রক্রিয়া শেষ করার আগেই যদি সংশোধিত আইনটি সংসদ থেকে পাস হয়ে আসে তাহলে আর সনদ দেয়া হবে না। 

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইনসহ শিক্ষা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওই সভায় অংশ নেন। 

সভা শেষে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এনটিআরসিএর আইনের যে খসড়া কেবিনেটে পাঠানো হয়েছিলো তার ওপর কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। যেগুলো নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। কেবিনেটের পর্যবেক্ষণ অনুসারে আমরা খসড়াটি সংশোধন করে তা ফের পাঠাবো। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072910785675049