শিক্ষা ক্যাডারের সন্তান ভর্তিতে জালিয়াতি কেনো - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা ক্যাডারের সন্তান ভর্তিতে জালিয়াতি কেনো

মাছুম বিল্লাহ |

সম্প্রতি দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত এক সংবাদে দেখলাম,  কুড়িগ্রামের অন্যতম বিদ্যাপীঠ, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয়জন এবং নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতি হয়েছে। ঠিক তার পরপরই দেখলাম, মাধ্যমিক শিক্ষা, রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নির্দেশে কুড়িগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্তে ওই জালিয়াতি প্রমাণিত হয়েছে। ওই সাতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যালয়টির কিছু শিক্ষক বলেছেন, প্রতি বছরই প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে থাকেন! 

বিপরীতে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, আর্থিক কোনো লেনদেন হয়নি। এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। ওই সাত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

যদি ওই সাত শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয় তাহলে ওই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত করা হলো। ওই সাত শিক্ষার্থী এই শিশু বয়সেই জেনে গেলেন, তাদের অভিভাবক ভিন্নপথে অর্থাৎ অসদুপায়ে তাদেরকে সেখানে ভর্তি করিয়েছিলেন। তাদের বিদ্যালয়ের যে প্রধান শিক্ষক তিনিও সৎ উপায়ে নয়, ভিন্নপন্থা অবলম্বন করেছিলেন। অর্থাৎ এই শিশু বয়সেই তারা অনিয়মের যে পাঠ পেলেন তা সারাজীবন তাদের হৃদয়পটে লেখা থাকবে। তারা জানলেন, এ সমাজে এমনটি করা যায়, এমনটিই হয়। তারা যখন বড় হবেন তখন তারাও কি সেটি করার শিক্ষা পেলেন না? তাদের নিষ্পাপ পথচলাকে আমরা অভিভাবকরা তো কলুষিত করতে পারি না।

শিক্ষা বিভাগের এ ধরনের দুর্নীতির কথা হরহামেশাই শোনা যায় যেটি একেবারেই কাম্য নয়। সমাজের আজকে যে অবস্থা তার পেছনে যতো কারণ আছে তার মধ্যে শিক্ষায় দুর্নীতি একটি বড় কারণ। এখন যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমরা তৈরি করছি তারাই দেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের আত্মনিয়োগ করবেন। তারা যদি দুর্নীতিযুক্ত ও কলুষিত কোনো পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠে তার প্রভাব তাদেরও প্রতিটি কাজেই কিছু না কিছু পড়বে। 

যে সাতজন কুড়িগ্রাম সরকারি বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়েছিলেন তাদের মধ্যে চারজনের অভিভাবক কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেব কর্মরত অর্থাৎ চারজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সন্তান। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এবং লটারির ফল পাশ কাটিয়ে প্রধান শিক্ষিকা জিয়াসমিন আরা হক টাকার বিনিময়ে একক সিদ্ধান্তে ওই সাতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি প্রতি বছর এমন কাজ করলেও বিষয়টি এবার প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছর ভর্তি নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে হাতহাতির ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনা আদালতেও গড়ায়। 

এটিও এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে হাতাহাতি হবে কেনো। হয়ে থাকলে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেনো সেটিও রহস্যজনক। 

স্কুলের ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী লটারির বাইরের কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা যাবে না। কিন্তু এসব শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অনলাইনে কোনো আবেদনও করেননি। প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে ওই সাত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কীভাবে একজন প্রধান শিক্ষক এ কাজ করতে পারেন, আর যাদের সন্তান ভর্তি হয়েছে তারাইবা অনলাইনে আবেদন করা ছাড়া এ ধরনের কাজ কিভাবে করতে পেরেছেন সেটিও আমাদের ভাবিয়ে তোলে। 

ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব বলেন, প্রধান শিক্ষক ভর্তি উপকমিটিকে ওই সাত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে বলেন। বিদ্যালয়টির অন্য এক সিনিয়ির শিক্ষক জানান, ভর্তি হওয়া চার শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চার শিক্ষকের সন্তান। তারা প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করে ভর্তির সুযোগ নেন। লিখিত আবেদনে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোটার কথা উল্লেখ করলেও সে কোটাতেও তাদের সন্তানরা স্থান পাননি। ওই কোটা আগেই পূরণ হয়েছে। সহোদর কোটায় দুজন এবং যমজ কোটায় একজন ভর্তির আবেদন করেছিলেন প্রধান শিক্ষকের কাছে। তবে অনলাইনে তাদের কোনো আবেদন নেই। আর সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ভালোভাবেই জানেন, তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তিতে কোনো কোটা নেই। বিষয়টি জেনেই তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। 

সরকারি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের সন্তানদের ভর্তির ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছিলো, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারীদের ভর্তির উপযুক্ত সন্তান সংখ্যার সমসংখ্যক আসন ওই প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত থাকবে। এক্ষেত্রে তাদের অনলাইনে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মচারী সরকারি মাধ্যমিক বালক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে এবং তাদের ভর্তি উপযুক্ত কোনো সন্তান বালিকা হলে কাছের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। একইভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মচারী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে এবং তাদের ভর্তি উপযুক্ত সন্তান বালক হলে নিকটতম সরকারি বালক বিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষিত থাকবে। এটি একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত। মাধ্যমিকের শিক্ষকরা অন্য শিক্ষার্থীদের পড়াবেন আর তাদের সন্তানদের কোথায় পড়াবেন সে বিষয়টি ব্যবস্থা যদি না থাকে তাহলে একদিকে যেমন তাদের প্রতি অবিচার করা হবে অন্যদিকে বিষয়টি যৌক্তিকও মনে হতো না। তবে সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার  কর্মকর্তাদের সন্তানদের ভর্তির জন্য কোনো কোটা সুবিধার কথা ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

লেখক : মাছুম বিল্লাহ, ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062370300292969