শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী বদলির উদ্যোগ: ফের বিরোধীতায় দুর্নীতিবাজ নেতারা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী বদলির উদ্যোগ: ফের বিরোধীতায় দুর্নীতিবাজ নেতারা

এনামুল হক প্রিন্স |

আবারো বিরোধীতায় নেমেছে সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা। গত ত্রিশ বছর ধরে তাদের বিরোধীতায় আন্তশিক্ষাবোর্ড কর্মচারী বদলির উদ্যোগ আটকে আছে। বদলি না থাকায় তারা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। বোর্ডের স্থায়ী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ আকন্ঠ দুর্নীতি, প্রেষণে আসা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের জিম্মি করা, বেয়াদবি করা, নানা কাজে বোর্ডে আসা নারী শিক্ষকদের হয়রানি, টাকার বিনিময়ে কেন্দ্র, অনুমতি পাইয়ে দেয়া এবং নাম ও বয়স সংশোধনে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে সিন্ডিকেট গঠন করা। স্থায়ী কর্মচারীদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে বোর্ডের দর্শনার্থীদের সঙ্গে শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণের অভিযোগ পুরনো। দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর জন্য নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইন অনুযায়ী এক বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্য বোর্ডে বদলি করা যাবে। বর্তমানে এ ধরনের বদলির কোনো সুযোগ নেই।

‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২৩’ নামে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম আরো বেশি কার্যকর ভূমিকার রাখবে : দুদক কমিশনার

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত হচ্ছে ১৯৬১ সালের দি ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স এবং ১৯৬২ সালের দ্য রেজিস্ট্রেশন অব প্রাইভেট স্কুলস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী। বোর্ডগুলো হলো—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ। ৯ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।

খসড়া আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, বোর্ডে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবিধানমালায় বর্ণিত শর্তাবলি সাপেক্ষে জনস্বার্থে এক বোর্ড থেকে অন্য বোর্ডে বদলি করা যাবে।

তবে, আবারো বদলির ধারা নিয়ে বিরোধীতা নেমেছেন শিক্ষা বোর্ডগুলোর অনেক কর্মচারী।তারা জামাত-শিবিরপন্থী পত্রিকা ও টেলিভিশনের নামধারী সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আন্তশিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ফেডারেশন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন একটি জাতীয় পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার চাইলে সবই করতে পারে। কিন্তু আমাদের নিয়োগপত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত ছিল না। এর আগেও আন্তবোর্ড বদলির অপচেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, সবাই যার যার এলাকায় স্থায়ী হয়েছে। বদলির বিধান হলে প্রায় ৩ হাজার পরিবার বিপদে পড়বে।

নতুন আইনের খসড়ায় আরো যা আছে:

তিন বছর মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদ হবে: খসড়া মতে, বোর্ড কার্যক্রম পরিচালনায় আর্থিক সংশ্লেষ আছে এমন ব্যক্তিদের পরিচালনা পর্ষদে রাখা যাবে না। এতে বলা হয়েছে, দেশের সাধারণ শিক্ষা বোর্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে তিন বছর মেয়াদি ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে। এর সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান। এই পর্ষদের অধীনে অর্থ কমিটি, নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটিসহ ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হবে। বোর্ডসংক্রান্ত বিষয়ে যাদের আর্থিক সংশ্লেষ আছে, তাদের পরিচালনা পর্ষদ ও এসব কমিটিতে রাখা যাবে না। পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্য প্রত্যক্ষভাবে বা কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে বোর্ডের সঙ্গে কোনো বিষয়ে চুক্তি করতে পারবেন না। কোনো শিক্ষা কোর্স বা পুস্তকে আর্থিক স্বার্থ আছে এমন কোনো ব্যক্তিকে বোর্ড পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা যাবে না। এমনকি বোর্ডের অনুমোদিত পুস্তক প্রকাশ, সংগ্রহ বা সরবরাহ করে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশীদার বা অন্য কোনো উপায়ে আর্থিক স্বার্থ থাকা ব্যক্তিকেও এই আইনের অধীনে গঠিত কোনো কমিটির সদস্য করা যাবে না।

সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষমতা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারি অবস্থায় শিক্ষা বোর্ডগুলোকে সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করতে স্থায়ীভাবে ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। করোনাকালে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট বিধি সংশোধন করা হয়েছিল।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন হচ্ছে। এতে মহামারিকালে বা জরুরি অবস্থায় শিক্ষা বোর্ডগুলোকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে অস্থায়ীভাবে করা হলেও সেটি নতুন আইনে স্থায়ী করা হচ্ছে।’

৬০ বছর পূর্ণ হলে অবসরে: খসড়া অনুযায়ী বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে অবসরে যাবেন। চাকরিকালীন মারা গেলে বা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হলে পরিবার বোর্ডের অধীন চাকরিকালীন প্রতিবছরের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ আনুতোষিক পাবেন।

খসড়ায় উল্লেখ আছে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই কাঠামোতে পরিচালনা করতে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি বিধিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার, বোর্ড পরিচালনা পর্ষদ অথবা চেয়ারম্যান বা বোর্ডের অন্য কোনো কর্মকর্তা এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কোনো কাজ করলে বা আদেশ জারি করলে তা নিয়ে কোনো আদালতে মামলা করা যাবে না। এমনকি অন্যভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067939758300781