বিশ্বের অনেক দেশেই প্রাথমিক শিক্ষকতা একটি আকর্ষণীয় চাকরি। এ পেশায় আয় ও সামাজিক মর্যাদা দুটিই বেশি। ভারতেও অবস্থা একেবারে খারাপ নয়। পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন আছে। শ্রীলংকায় প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি প্রথম শ্রেণীর করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় শিক্ষকদের অন্যতম মর্যাদায় বসানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অব্যাহত সংকটের আবর্তের মধ্যেই আছে। ৬৪ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২১ হাজারেই নেই প্রধান শিক্ষক। ২০১৬ সালের আগস্টে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের জন্য ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জনকে সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এ নিয়োগ এক বছরেও হয়নি। সম্প্রতি পত্রিকায় এসেছে, আদেশ জারি হয়েছে কিন্তু শিক্ষকরা কাজে যোগদান করেছেন কিনা, সে ব্যাপারে কিছু নেই। একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বছরের পর বছর, ফলে শ্রেণীকক্ষে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যাও এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০ হাজার। সহকারী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে কর্মঘণ্টার বেশির ভাগ ব্যস্ত থাকেন প্রশাসনিক কাজে। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান না।
ফলে বেশির ভাগ বিদ্যালয়েই সবসময় শিক্ষকের পদ শূন্য থাকে। আর যারা আছেন, তাদের মানমর্যাদা নিয়েও দেশ খুব একটা চিন্তিত নয়। এছাড়া সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় হাজার হাজার শিশু হয়ে পড়ছে নিরাপত্তাহীন। প্রশিক্ষিত, দক্ষ শিক্ষকের অভাব তো আছেই। ইউনেস্কোর এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল ব্যুরো ফর এডুকেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্রশিক্ষিত শিক্ষক মাত্র ৫৮ শতাংশ। অথচ প্রতিবেশী দেশ নেপালে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের হার ৯০ শতাংশ। পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ৮২ শতাংশ, মালদ্বীপে ৭৮ শতাংশ এবং আশ্চর্যজনকভাবে মিয়ানমারে শতভাগ শিক্ষকই প্রশিক্ষিত। প্রধানত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবেই শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করায় এ পদে এখন নিয়োগ ও পদোন্নতির দায়িত্ব পিএসসির ওপর পড়েছে। একই কারণে পদোন্নতির লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরি করতে পারেনি গত এক বছরে অধিদপ্তর।
দু-চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এরূপ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ১৪০ নম্বর মাথন নিগুয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৬৫, শিক্ষক তিনজন। তার মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়টি উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা সদরে বিভিন্ন মিটিংয়ে গেলে তার পক্ষে আর ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। ক্লাসের সংখ্যা পাঁচ, শিক্ষক দুজন। ফলে শিক্ষকদের এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে দৌড়াতে হয়। লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার দক্ষিণ চররহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬২০। শিক্ষকের সাতটি পদ থাকলেও আছেন পাঁচজন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় একজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে চারজন শিক্ষক দিয়েই চালাতে হয় ক্লাস, লেখাপড়া। এখানে প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ১১১ জন। শিক্ষক না থাকায় দুই শাখা করা যাচ্ছে না। এসব শ্রেণীকক্ষে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা চাপাচাপি করে বসছে, অন্যদিকে ঘামের প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ক্লাসে দাঁড়িয়ে থাকাই মুশকিল। কী শেখানো হবে সেখানে পাঠক বুঝতেই পারছেন। দেশের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই আছেন চারজন শিক্ষক। এর মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, তাকে প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণসহ প্রশাসনিক নানা কাজ করতে হয়। আবার শিক্ষকদের ৬০ শতাংশ নারী হওয়ায় মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানাভাবে একজনের ছুটি থাকে।
অনেক সময় বাকি একজনকেই চালাতে হয় বিদ্যালয়। ফলে দু-তিনটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একত্র করে পড়ান সহকারী শিক্ষকরা। একটি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাসের সময় আড়াই ঘণ্টা। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে চারটি ক্লাস এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৪৫ মিনিটের ছয়টি ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু দুজন শিক্ষকের পক্ষে এত ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার অনেক বিদ্যালয়েই কোনো রকমে দু-একটি ক্লাস করেই ছুটি দেয়া হচ্ছে। ফলে সিলেবাস যেমন শেষ হয় না, তেমনি শিক্ষাসংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাবলিও অসমাপ্ত থেকে যায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) সূত্রমতে, পদোন্নতিসংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে শূন্য আসনের ৩৫ শতাংশ নিয়োগের বিধান রয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শূন্য পদ সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। পদটি তৃতীয় শ্রেণী থাকার সময় সরাসরি নিয়োগ দিত অধিদপ্তর। এখন দ্বিতীয় শ্রেণী হওয়ায় নিয়োগ দিতে হবে পিএসসিকে। কিন্তু তাদের পক্ষে দ্রুততম সময়ে সাত হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। আর ১৪ হাজার সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়াটাও পিএসসির পক্ষে দুরূহ ব্যাপার। আমরা চাই দ্রুত শূন্য পদ পূরণ করা হোক। তাদের নিয়োগ বিধিতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। মূল উদ্যোগ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে। আর ৩৪তম বিসিএস থেকে প্রধান শিক্ষক পদে যে সুপারিশ গেছে, এটি আমরা দ্বিতীয় শ্রেণী হিসেবে দিয়েছি। তবে তারা কোন গ্রেডে বেতন পাবেন তা নির্ধারণ করতে হবে মন্ত্রণালয়কেই।
জরিপেও প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের হতাশার চিত্র ধরা পড়েছে। ২০১৬ সালে রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশনে (রেস) প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, প্রাথমিকে ১৩ শতাংশ শিক্ষক পুরোপুরি সৃজনশীল বা যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন বোঝেন না। ৪২ শতাংশ সীমিত পরিসরে নিজেরা বুঝলেও ক্লাসে বোঝাতে পারেন না, বাকি ৪৫ শতাংশ বোঝেন না। সৃজনশীল না বোঝায় ৪৭ শতাংশ শিক্ষক বাজারের গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করেন। ৩৫ শতাংশ সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং বাকি ১৮ শতাংশ নিজেদের ধ্যান-ধারণা থেকে পড়ান। পুরো দেশের বাস্তব চিত্র আসলে এর চেয়েও খারাপ।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবেই ১০ হাজার জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব ভবনের ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ থেকে চুইয়ে পানি পড়ে কক্ষে। আবার অনেক বিদ্যালয়েই টিনের ঘর। সেগুলো নড়বড়ে অবস্থায় টিকে আছে। এমন দুরবস্থার চিত্র দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ২০১২ সালে প্রকল্প নেয়া হলেও জরাজীর্ণ সব ভবন পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এখন তো প্রকল্পের মেয়াদই ফুরিয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে আরেকটি প্রকল্প চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে সম্প্রতি জানা যায়। ২০১৩ সালে একযোগে প্রায় ২৬ হাজার রেজিস্টার্ড, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত, কমিউনিটি ও এনজিও পরিচালিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করা হয়। এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ভবনই হয়তো সংস্কার বা পুননির্মাণ করতে হবে। বর্তমানে জরাজীর্ণ ও জরুরি সংস্কার প্রয়োজন এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষকেরই মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, বলে ডিপিইর ভাষ্য। এসব শিক্ষকের বেশির ভাগেরই প্রশিক্ষণ নেই এবং চাকরি হয়েছে পরিচালনা পর্ষদকে অর্থ দিয়ে। প্রাথমিকে চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে এই জাতীয়করণ বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখের ওপরে। এছাড়া রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়ের জন্য ২০১২ সালে প্যানেল করা ২৮ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষের পথে। এসব শিক্ষকের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে মানের দিক দিয়ে মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছে প্রাথমিক শিক্ষা।
আমরা উন্নত বিশ্বের প্রাথমিক শিক্ষার দিকে একটু তাকালে কী চিত্র দেখতে পাই? জাপানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়কাল ধরা হয় ছয় বছর। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা হিসাব করে ৬-৩-৩-৪ এভাবে। গ্রেড ওয়ান থেকে সিক্স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা, তার পরের তিন বছর জুনিয়র হাই স্কুল এবং পর্যায়ক্রমে পরের তিন বছর সিনিয়র হাই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিক ও জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষাগ্রহণ বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মতো বাধ্যতামূলক। বাধ্যতামূলক শিক্ষার এই স্তরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দুটো ভাগ আছে। সবার জন্য শিক্ষানীতিতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আছে বিশেষ বিভাগ। এসব প্রতিবন্ধী শিশুও খুব সম্মানের সঙ্গে সাধারণ শিশুদের মতোই অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে, কিন্তু তাদের পরিচর্যা করা হয় বিশেষভাবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা সোম থেকে শুক্রবার— সপ্তাহে পাঁচদিন করে সারা বছর, সাধারণত ৩৫ সপ্তাহ ক্লাস করে। জাপানে গ্রেড টপকানোর কোনো নিয়ম নেই এবং প্রতিটি গ্রেডই বাধ্যতামূলক। এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব শিশুকে বাধ্যতামূলকভাবে যে বিষয়গুলো পড়তে হয় সেগুলো হচ্ছে— জাপানি ভাষা, সোস্যাল স্টাডিজ, অংক, বিজ্ঞান, লাইফ স্টাডিজ, মিউজিক, ড্রইং অ্যান্ড ক্রাফট, হোম ইকোনমিকস, ফিজিক্যাল এডুকেশন। এছাড়া পড়তে হয় নৈতিক শিক্ষা এবং সঙ্গে সঙ্গে অংশ নিতে হয় বিশেষ কার্যক্রম ও সমন্বিত পাঠ্যক্রমে। খুবই দক্ষ শিক্ষকমণ্ডলী তাদের মেধা, শ্রম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে শিক্ষাকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছেন যে, সাধারণ জাপানিরা এই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর খুব আস্থাশীল এবং শিক্ষকদের খুব সম্মান করে।
জাপানি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের অন্যতম দুটি শর্ত হলো— ধারাবাহিকতা ও তদারকি। প্রতি ১০ বছরে এদের বাস্তবসম্মত ও প্রায়োগিক শিক্ষাক্রমগুলো পর্যালোচনা ও উন্নততর করা হয়। জাপানের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে খাবার পরিবেশন করা হয়। এর মান নিশ্চিত করার জন্য একজন পুষ্টিবিদ থাকেন, তিনি শিশুদের জন্য প্রতিদিনের ক্যালরি মেপে সুষম খাবার দিয়ে থাকেন এবং এই মেনু দেখে প্রতিদিনের খাবার প্রস্তুত করেন একগুচ্ছ দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাঁধুনি। প্রতিটি স্কুলেই রান্নাঘর আছে, যেখানে খুবই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় খাবারের গুণগত মান।
দৈনিক আহারের সময় শিশুরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে খাবার গ্রহণ করে। তাদের প্রতিদিন খাবার গ্রহণের আগে নিয়ম করে জানানো হয় তারা কী খাচ্ছে, কেন খাচ্ছে। শেখানো হয় যিনি খাবার রান্না করেছেন, কীভাবে তাকে প্রশংসা করতে হয়। খাওয়ার পর হাত ধোয়ার গুরুত্ব ছবির মাধ্যমে শিখিয়ে দেয়া হয়। দুপুরে খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করতে হয়। প্রতিটি স্কুলে রয়েছে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার। জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পর্ব সমাপনী ঘোষণা করা হয় এবং প্রথম পর্বের ক্লাস পারফরম্যান্স, কে ব্যক্তিগতভাবে কত বই পড়েছে, সৃজনশীল লেখালেখি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খেলাধুলা, নেতৃত্ব, বন্ধু, শিক্ষক ও মা-বাবা এবং অন্যদের প্রতি শিশুর কী মনোভাব— এসবের ভিত্তিতে প্রতিটি শিশুকে মূল্যায়ন করা হয়। আর বিশেষভাবে বিদ্যালয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে শিশুরা কীভাবে নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করে চলবে, সে সম্পর্কে নৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়। লম্বা সময়ের জন্য তারা গ্রীষ্মকালীন ছুটি ভোগ করে। (সূত্র: শিক্ষালাপ জানুয়ারি-জুন ২০১৪, ভিনদেশের শিক্ষা: জাপান, ফজিলাতুন নেছা শাপলা)
ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ পি. ব্লাক ও ডি. উইলিয়াম আমাদের দেশের শ্রেণীকক্ষগুলোকে কালো বক্সের সঙ্গে তুলনা করেন। যেখানে বাইরে থেকে কত কিছুই না ইনপুট দেয়া হচ্ছে কিন্তু বাহ্যিকভাবে দেখার উপায় নেই যে, এ ইনপুটগুলো কতটা কার্যকরভাবে প্রসেসিং হচ্ছে। পাস বা ফেল দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি, যা দেখে বোঝার উপায় নেই যে শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে কোন অংশে ভালো বা খারাপ করেছে। এ পদ্ধতি তাই শিক্ষার্থীদের শিখন সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করে না। ফলে শিক্ষকও এ সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। এতে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু না শিখেই পরবর্তী ক্লাসে চলে যায়। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন গাঠনিক মূল্যায়ন। ছোট ছোট এসব শিক্ষার্থীকে যে পদ্ধতিতে আমরা মূল্যায়ন করছি, তা কোনোভাবেই বলে দিচ্ছে না ভবিষ্যতে তারা কে কোথায় যাবে, কাদের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কোন ধরনের প্রতিভা, কে কোনভাবে দেশ ও সমাজকে সেবা করবে। তাই প্রাথমিকের মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়েও গভীরভাবে ভাবতে হবে আমাদের।
লেখক: মাছুম বিল্লাহ, লেখক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত।