ঢাকার ধামরাইয়ে খাগাইল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, বাইরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ব্যয় করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়নের খাগাইল উচ্চবিদ্যালয়ের নামে ৪ হাজার ৪৪৬ জেএসসি এবং ১ হাজার ৯১২ এসএসসি পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এই পরীক্ষার্থীরা সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থী। জেএসসিতে প্রতি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং এসএসসিতে ৪ হাজার ৫০০ বা তার দ্বিগুণ, তিন গুণও টাকা নেওয়া হয়।
ফলে ৭ বছরে এভাবে প্রতিষ্ঠানের আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে বোর্ড ফি, কেন্দ্র ফি ও অন্যান্য ফি বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৪৫ লাখ ৬ হাজার ৪০০ টাকা। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৯৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা। যার কোনো হিসাব দেননি অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আব্দুল হামিদ। এসব টাকা প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে খাগাইল স্কুলের সাবেক শিক্ষক মুকুল হোসেন বলেন, ‘স্কুলের আয়-ব্যয় শুধু প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম ও সভাপতি আব্দুল হামিদ জানতেন। এমন পরীক্ষার নামে কি পরিমাণ আয় হতো তার মনগড়া হিসাব রসিদে লিখে দিতেন।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জালাল উদ্দীন বলেন, ৭ বছরে এসব পরীক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া টাকার মধ্যে ৯৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ ছাড়া মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি এবং সেশন চার্জ হিসেবে ৬২ লাখ ১৬ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এসব টাকার আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি দেননি। এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তাঁরা।
খাগাইল উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য রতন মিয়া জানান, স্কুলের নামে জমি কেনার অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে কি না, এর স্বচ্ছ হিসাব প্রয়োজন। কিন্তু তাঁরা হিসাব দিচ্ছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর বলেন, ‘আমাদের ৫ শতাংশ জমি স্কুলের নামে কেনা হয়। আমরা রাজি ছিলাম না। সবাই বলাতে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে রাজি হই। ১ লাখ টাকা দিতে রাজী হয় স্কুল কতৃপক্ষ। ২০ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় তিন বছর হইয়ে গেলেও এখনো বাকি টাকা পাইনি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, বাইরের প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হয়েছে।
সভাপতি আব্দুল হামিদ বলেন, এমন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা পাওয়া গেছে, তা দিয়ে শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়েছে। আর কিছু টাকা দিয়ে স্কুলের নামে জমি কেনা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আশরাফী বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ‘এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।