সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে বিভাগীয় মামলা - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে বিভাগীয় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ৫ বছর অন্তর সম্পদবিবরণী জমা দিতেই হবে। জমা দেওয়ার পর তা যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য মনিটরিং ও যাচাইয়ের ক্ষমতা দিয়ে কর্মচারী (আচরণ) বিধি ১৯৭৯ সংশোধন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করাসহ আরও বেশ কিছু সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ কার্যক্রম শুরু করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯’ এবং এ সংক্রান্ত একাধিক বইয়ের লেখক সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া সোমবার বলেন, নতুন করে বিধি সংশোধনের প্রয়োজন ছিল না। কেননা, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি ১৯৭৯-এর বিধি ৩২ নম্বরে স্পষ্টভাবে বলা আছে, এ বিধির কোনো কিছু কোনো কর্মচারী লঙ্ঘন করলে সেটি অসদাচরণের অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। ফলে সম্পত্তির ঘোষণা সংক্রান্ত ১৩নং বিধি লঙ্ঘন করে কেউ যদি প্রতি ৫ বছর অন্তর তার নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীল প্রত্যেকের সম্পত্তির হিসাব জমা না দেন সেটিও মিসকন্ডাক্ট বা অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রিটার্ন জমা দেওয়া হয় আয়কর আইনের অধীনে। সেখানে শুধু যিনি রিটার্ন জমা দেন তার আয় দেখানো হয়। কিন্তু সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার বিধান সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি ১৯৭৯-এর অধীনে। এটি করা হয়েছে কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য। এছাড়া এখানে একজন সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী সম্পত্তির ঘোষণা কিংবা সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার সময় স্ত্রী সন্তানসহ তার ওপর নির্ভরশীল প্রত্যেকের সম্পদবিবরণীও দিতে হয়। ৫ বছরের মধ্যে যেসব সম্পদের বৃদ্ধি ঘটবে তার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যাও দিতে হবে। ফলে রিটার্ন জমা দেওয়ার সঙ্গে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়াকে গুলিয়ে ফেললে হবে না। দুটো ভিন্ন বিষয়। তাছাড়া বার্ষিক রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় অনেকে অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ নানা পন্থায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বৈধ করে থাকেন। সেটি কিন্তু সরকারি কর্মচারী বিধির অধীনে জোড়াতালি দিয়ে বৈধ করা সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষ চাইলে শক্তভাবে যাচাই করে দুর্নীতির বিষয়টি চিহ্নিত করতে পারবে।

তবে তিনি মনে করেন, যেহেতু উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, সেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিধি সংশোধন করে যদি আরও স্পষ্টীকরণ করতে চায় সেটি দোষের কিছু নয়। কিন্তু সংশোধনও বড় কথা নয়, শক্তভাবে বাস্তবায়ন করাটা জরুরি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএফএম হায়াতুল্লাহ বলেন, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২৪ জুন এ বিষয়ে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেকে সম্পদবিবরণী জমা দেন না। তিনি মনে করেন, আচরণবিধি উপেক্ষা করার সুযোগ কারও নেই। তাই প্রতি ৫ বছর অন্তর প্রত্যেক গণকর্মচারীকে সম্পদবিবরণী জমা দিতেই হবে। তিনি জানান, হয়তো এ বিষয়ে শিগগির আরও একটি তাগিদপত্র পাঠানো হতে পারে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রতি ৫ বছর অন্তর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিষয়টিকে আরও যুগোপযোগী ও স্বচ্ছ করতে এ সংক্রান্ত সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় বেশ কিছু সংশোধনী আনা হবে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আশা করছেন, কয়েক মাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে। সেক্ষেত্রে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার বিদ্যমান ফরম আরও আধুনিকায়ন করা হতে পারে।

১৯৭৯ সালে প্রণীত এ সংক্রান্ত বিধিতে প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দাখিল করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেটিও ওইভাবে কেউ প্রতিপালন করতেন না। এর আগে প্রথমে ছিল চাকরিতে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে তার সম্পদবিবরণী জমা দিতে হতো। পরে ২০০২ সালের এসে এতে সংশোধনী এনে প্রতি বছরের স্থলে ৫ বছর অন্তর ডিসেম্বরে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার বিধান প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু সবকিছু কাগুজে বিধিমালায় পরিণত হয়। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ ছিল না। ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা জারি করাসহ এ সংক্রান্ত নির্ধারিত ফরম প্রকাশ করা হয়। ওই সময়ে অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়া শুরু করেন। প্রথমদিকে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা জমা দেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব হিসাবের নথিপত্র সংরক্ষণ করতে বেশ কয়েকটি নতুন আলমারিও কেনা হয়। কয়েকটি ফাইল যাচাই করে বড় ধরনের কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। দেখা যায়, প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক হলেও সেটি তিনি আয়কর রিটার্নে দাখিল করেননি। দুদকের ভয়ে সম্পদবিবরণীতে উল্লেখ করেন। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদন করে এসব সস্পদ অর্জনের বিষয়ে ভূতাপেক্ষ অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতে সব কিছুতে ভাটা পড়ে যায়। আসলে সর্ষের মাঝে ভূত ধরা পড়ার কারণে পরে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়া নিয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তারা পিছু হটেন।

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034639835357666