করোনার প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বন্ধ রয়েছে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে জুলাই থেকে চলছে অনলাইনে ক্লাস। কিন্তু পরীক্ষা না থাকায় অনলাইন ক্লাসের আগ্রহ হারিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দিন দিন ক্লাসগুলোতে কমছে শিক্ষার্থী। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চেয়েছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে ভর্তি নিয়ে আজ মঙ্গলবার সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির সভা রয়েছে। সেখানেও এ ব্যাপারে আলোচনা করবেন একাধিক উপাচার্য। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায় ইউজিসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গত রবিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পরীক্ষার অনুমতি চাওয়া হয়।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়, দেশে করোনা মহামারি দেখা দেওয়ায় মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের চলমান পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল বন্ধ রেখে অসমাপ্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে। পরীক্ষাগুলো নেওয়ার অনুমোদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওই চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি আমরা এখনো হাতে পাইনি। তবে চুয়েটের আবেদন পাওয়ার পর আমরা এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা মেসে থেকে পরীক্ষা দেবে। কিন্তু এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না বলে কমিশন মনে করছে। এ ছাড়া এখন শীতের মৌসুম। কভিড সংক্রমণও কিছুটা বেড়েছে। তাই পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে চুয়েটকে সম্মতি দেওয়া হয়নি।’
জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি না দিলেও অক্টোবর থেকে শর্ত সাপেক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যাবহারিক ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ইউজিসি। তবে ক্লাস ও পরীক্ষার সময় দুজন শিক্ষার্থীর মাঝে কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থী ল্যাব ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এক দিনে শুধু একটি ক্লাস নেওয়া যাবে। এ ছাড়া আগে থেকেই অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষাও নিচ্ছিল তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দুই রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে তারা দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। আবার যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, তারা ঠিকই যথাসময়ে পড়ালেখা শেষ করছে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘পরীক্ষা না থাকলে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যায়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া যায়, সে উপায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। তারা যদি প্রস্তাব দেয়, তাহলে তা কমিশন বিবেচনা করবে। এখন অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী সেখানে পরীক্ষা নেওয়াটা কঠিন। কিন্তু যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম, তাদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া ততটা কঠিন নয়।’
জানা যায়, করোনার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ছোট নিয়োগ পরীক্ষাও আটকে আছে। এতে পরবর্তী পদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও জট পাকছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী যাঁরা শেষবারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিস খোলা থাকছে, তাই অনেক শাখায় লোকবল সংকটও দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউজিসির পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগ পরীক্ষা নিতে কোনো বাধা নেই। অনেক সরকারি দপ্তরেই নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়োগ পরীক্ষা নিলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে নিয়োগ পরীক্ষার পদগুলো অবশ্যই অনুমোদিত হতে হবে।’