হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজে নিয়োগ ‘ইচ্ছেমতো’ - দৈনিকশিক্ষা

হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজে নিয়োগ ‘ইচ্ছেমতো’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থীকে বাদ দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পরের স্থান অর্জনকারীদের। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সনদ বাধ্যতামূলক হলেও অনেকের তা নেই। এমনকি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি।

কোনো বিভাগে নিয়োগ দেওয়ার কথা একজনকে—দেওয়া হয়েছে পাঁচজনকে। নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন না মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কোনো প্রতিনিধি। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে বসানো হয়েছে প্রথম শ্রেণির প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে।

রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের অনিয়ম–অব্যবস্থাপনার এ চিত্র পেয়েছে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। সংস্থাটির তদন্ত প্রতিবেদনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অন্তত ১৪টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে নিয়ম না মানার তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৩ সাল থেকে হওয়া এসব নিয়মবহির্ভূত নিয়োগের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক নয়ছয়ের তথ্যও পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গত জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ডিআইএ। এতে নিয়মের বাইরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল, নামমাত্র শিক্ষার্থী থাকা বিভাগগুলোর পাঠদান বন্ধসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ আবু বক্কর চৌধুরীর সময় (২০০১ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি) এসব অনিয়ম হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি মারা গেছেন। তাঁর সময়ে সভাপতি ছিলেন এস এম বাহালুল মজনু (২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর)।

শান্তিনগরে অবস্থিত হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী প্রায় ১০ হাজার। শিক্ষক রয়েছেন ১৪৩ জন। কর্মকর্তা–কর্মচারীর সংখ্যা ৭১।

‘ইচ্ছেমতো’ নিয়োগ: ৭৪ জন শিক্ষক ডিআইএর কাছে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ আনেন। অভিযোগে বলা হয়, পছন্দের প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার ফলাফলের নম্বরপত্র কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। আর্থিক লেনদেন হয়েছে। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে ডিআইএ। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলা বিভাগের প্রভাষক নজরুল ইসলাম ২০১৩ সালে যোগ দেন। এ ক্ষেত্রে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। পরীক্ষার সময় ছিলেন না মাউশি প্রতিনিধি। ২০১৬ সালে প্রকাশিত আরেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ বিভাগে একজন প্রভাষক নিয়োগের কথা ছিল, নিয়োগ দেওয়া হয় পাঁচজনকে। পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারীকে বাদ দেওয়া হয়।

২০১৪ সালে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক নিয়োগও বিধিসম্মত হয়নি। হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ২০১৭ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিনজন প্রভাষক নিয়োগের কথা বলা ছিল। পরীক্ষা নেওয়ার পর কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। কিন্তু পরিচালনা কমিটি ছয়জনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এখানেও বঞ্চিত হন প্রথম স্থান অধিকারী।

ডিআইএ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগে পাঁচজনকে নিয়োগ দেওয়ার পরীক্ষায় মাউশির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। একই ঘটনা ঘটেছে প্রাণরসায়ন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগেও। এ বিভাগে নিয়োগ পাওয়া শারমীন সুলতানার এনটিআরসিএর নিবন্ধন সনদ নেই। ২০১৬ সালে ইংরেজি বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম ও চতুর্থ স্থান অধিকারীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেয় পরিচালনা কমিটি। এ দুজনেরই শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নেই। অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে মার্কেটিং বিভাগ, ফিন্যান্স বিভাগ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (অনার্স কোর্স) বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রেও।

শিক্ষার্থীসংকট: গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস) ও স্নাতকোত্তর স্তরে কোনো শিক্ষার্থী নেই। শুধু স্নাতক (সম্মান) স্তরে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ১১ জন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৩ জন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৫ জন এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এ বিষয়ে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ চারজন প্রভাষক আছেন। একইভাবে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকে (সম্মান) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ২ জন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৮ জন এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস) ও স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থী নেই। এ বিভাগে শিক্ষক আছেন একজন। পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী নেই থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজেও। এ পরিস্থিতিতে এসব বিষয় চালু রাখায় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডিআইটি।

পদায়নে অনিয়ম: কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তফা ভূইয়া ২০০০ সালে অফিস সহকারী পদে যোগ দেন। কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে প্রথমে তাঁকে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং ২০১৩ সালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তাঁকে কলেজ তহবিল থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার বেতন–ভাতার (বেতন কোড-৯) সমপরিমাণ সুযোগ দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষের বেতন নিয়ে প্রশ্ন: বর্তমান অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার মিয়া কলেজ থেকে মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৪০ টাকা নেন। পাশাপাশি সরকার থেকে এমপিও বাবদ পান ৫০ হাজার ১৭২ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর মাসিক বেতন-ভাতা চতুর্থ গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তার চেয়ে অনেক বেশি। অবশ্য করোনাকালে আর্থিক সংকটে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকেরা কম বেতন (কলেজ থেকে পাওয়া) নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আর্থিক নয়ছয়ের চিত্র: আসবাব কেনার ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক বিধি অনুসরণ করা হয়নি। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জেনারেটর কেনা হয়েছে। ২০১৯ সালে কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল বাবদ এক লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। যদিও শিক্ষক–কর্মচারীদের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পক্ষে মেডিকেল সনদ পাওয়া যায়নি।

 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076069831848145