কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও গত দুইবারের মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের হয়েছে। কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আরফানুল হক রিফাত। বেসরকারিভাবে ১০৫ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী নৌকার প্রতীক নিয়ে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত, সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ঘড়ি মার্কায় পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। অপর আলোচিত মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
কুমিল্লাবাসী বলছেন, ‘ঘরের শত্রু’ নিজামউদ্দিন কায়সার এ নির্বাচনে সাক্কুর জীবনের প্রথম পরাজয়ের কারণ। স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করে কায়সারের ভোটে দাঁড়ানোর ‘আসল লক্ষ্য’ ছিল ‘সাক্কু ঠেকাও’।
বুধবার দিনভর ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণা করা হয়।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ।
এ নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫ কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ভোট নেয়া হয়েছে ইভিএমের মাধ্যমে। এর মধ্যে ৮৯ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে দেখেছিলো নির্বাচন কমিশন।
কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ, স্থানীয় প্রভাব খাটানো এবং বহিরাগত হিসেবে ভোটকেন্দ্র এলাকায় প্রবেশ করার দায়ে ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
সকাল ৮টা থেকে কুমিল্লা সিটিতে ভোটগ্রহণ শুরু করে ইসি। টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেন ভোটাররা। সকাল থেকেই ছিল প্রতিটি কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়।
সকাল থেকেই ভোটারদের আগ্রহ ছিল দেখার মতো। বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করেই লাইনে দাঁড়ান ভোটাররা। ভোট দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন ভোটাররা।
কুমিল্লায় সব কেন্দ্রে ভোট নেয়া হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। অবশ্য ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে ইভিএমের ত্রুটি দেখা দেয়ায় ৪২ মিনিট বিলম্বে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। এ ছাড়া আর কোনো কেন্দ্রে ইভিএমের ত্রুটির খবর পাওয়া যায়নি।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ও দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন মনিটর করতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের লেভেল-৪-এর ৪১৩ নম্বর কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে ইসি।
কুমিল্লায় ৮৫০টি ক্যামেরা বসিয়েছে ইসি। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে গোপন কক্ষে উঁকি দেয়ার বিষয়টি উঠে এলেও ইসি জানায় এমন কোনো ঘটনা কুমিল্লার কোনো ভোটকেন্দ্রে ঘটেনি। তারা সিসিটিভিতে এমন কিছু দেখেননি।
এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ভোটার দুজন।