৮ ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ, শিক্ষক পলাতক - দৈনিকশিক্ষা

৮ ছাত্রকে ধর্ষণের অভিযোগ, শিক্ষক পলাতক

সেনবাগ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি |

নোয়াখালীর সেনবাগের গোপালপুর তা'লিমুল কুরআন মাদরাসার আট আবাসিক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার প্রধান হুজুরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত মাদরাসা প্রধান আবদুল ফাত্তাহ গা ডাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছে পুলিশ। 

গত শনিবার উপজেলার নবীপুর ইউপির গোপালপুর তা'লিমুল কুরআন মাদরাসা প্রধান আবদুল ফাত্তাহর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে শতাধিক অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন মাদরাসা ঘেরাও করেন। এর ফাঁকে মাদরাসার শিক্ষক জহিরুল ইসলামের সহায়তায় অভিযুক্ত মাদরাসা প্রধান আবদুল ফাত্তাহ পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। এদিন দিবাগত রাত পৌনে ১১টায় মাদরাসার প্রধান পরিচালক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ তৈয়ব হুজুরের চট্টগ্রামের সেগুনবাগানের বাসায় মুখ্য কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কমিটির সভাপতি কাজী সরওয়ার আলম, সেক্রেটারি আবদুল ছাত্তার, শিক্ষক জহিরুল ইসলাম ও সদস্য কাজী ফিরোজ আলম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মাদরাসার পরিচালক অভিযুক্ত আবদুল ফাত্তাহের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আনা অনৈতিক আচরণ প্রমাণিত হওয়ায় দায়সারাভাবে আবদুল ফাত্তাহকে পরিচালকের পদ হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ভুক্তভোগী আবাসিক ছাত্র ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমকর্মীর। সে জানায়, মোট ১৬ জন আবাসিক ছাত্রের মধ্যে ৮ জন ছাত্রকে বিভিন্ন সময়ে পরিচালক আবদুল ফাত্তাহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাঁর শয়ন কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। কোমলমতি ছাত্ররা প্রতিবাদ করলে তাদের করা হত নির্যাতন। 

ভুক্তভোগী ওমর ফারুক কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, আবাসিক ছাত্রদের মধ্যে ৫ম শ্রেণির সোহান,৩য় শ্রেণির জিসান,৫ম শ্রেণির রিয়ান,৪র্থ শ্রেণির কামরুল একই শ্রেণির শাহেদ,২য় শ্রেণির শাওন একই শ্রেণির শাহীনসহ সে নিজেও পাশবিক নির্যাতনের শিকার।

নুর নবী নামে একজন অভিভাবক জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বড় হুজুরের অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক জহিরুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। উল্টো তিনি বড় হুজুরের চাহিদা মেটাতে আবাসিক ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুল ফাত্তাহ ও জহুরুল ইসলামের বিচার দাবি করেন এ অভিভাবক। 

এদিকে এ ঘটনার সত্যতা জানতে গত রোববার রাতে মাদরাসার অফিস কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলে অর্ধশতাধিক অভিভাবক ও এলাকাবাসী সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। ধর্ষণের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে এ সময় স্থানীয় চান মিয়া নামের এক ব্যক্তি অভিযোগকারীদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। 

পরে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতসহ করণীয় বিষয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাদরাসায় বৈঠক করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বেলায়েত হোসেন সোহেল। এ সময় সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওহাব, রামেন্দ্র মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বিএসসি, মাদরাসার সেক্রেটারি হাজী আবদুল ছাত্তার, শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। 

সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল ওহাব জানান, শিক্ষকের অনৈতিক বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং আবাসিক ভবন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সোহেল ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নোমান হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ১২০ শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে তা'লিমুল কুরআন প্রতিষ্ঠা করেন ব্যবসায়ী হাজী আবদুল ছাত্তার, হেফজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন আমেরিকা প্রবাসী মোতাহের হোসেন ও মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম। বর্তমানে ৩টি বিভাগে ৫৩১ জন ছাত্র–ছাত্রী ও ১১ জন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছে। ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুল ফাত্তাহ গত ৫ দিন ধরে পলাতক রয়েছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইলে বারবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের নিজ বাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজীতে তাঁর হদিস মিলছে না। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037341117858887