সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় প্রাপ্তিতে মেধাই ভিত্তি - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় প্রাপ্তিতে মেধাই ভিত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। একটি মাত্র পরীক্ষা দিয়েই দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো একটিতে ভর্তির সুযোগ পাবেন একজন শিক্ষার্থী। তবে এ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানা জিজ্ঞাসা। কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন তা নিয়ে চলছে আলাপ আলোচনা। কারো পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আবার কেউ চান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়তে। শিক্ষার্থীরা কি তাদের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় পাবেন, বা পছন্দমতো বিষয় কি নিতে পারবেন? নাকি আবারও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে!

তেমন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই গত ২৩ জানুয়ারি ইউজিসিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তের পর এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের মনে। মাত্র চার মাসের প্রস্তুতিতে কতখানি সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষাটি আয়োজন করা যাবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।

তবে শিক্ষার্থীরা মেরিটের ভিত্তিতেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় পাবে উল্লেখ করে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন, কোনো সমস্যা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা তাদের।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষক

এ বিষয়ে বুয়েটের শিক্ষক ড. কায়কোবাদ সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে চাইছি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হোক। অবশেষে সেটা হচ্ছে, এতে আমরা আনন্দিত। কিন্তু মাত্র চার মাস আগে হঠাৎই সিদ্ধান্ত হলো আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই পরীক্ষা নেয়া হবে। এত অল্প সময়ে এত বড় পরীক্ষার আয়োজন করা সহজ কথা নয়।’

ড. কায়কোবাদ বলেন, ‘পরীক্ষাটি আয়োজন করবে তা-ই এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। বাকি বহু কাজ তো পড়েই আছে। কোনো শিক্ষার্থী চাইবে বুয়েটে পড়তে আবার কেউ চাইবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। আবার ওই একই শিক্ষার্থী তো রুয়েটেও পড়তে চাইতে পারে। তখন তার পছন্দ বা চাহিদা কোন প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে? এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা এখনো কেউ জানে না।’

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘পরীক্ষা কোন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করবে? এই পরীক্ষার মান কতখানি নিশ্চিত করা যাবে তা নিয়েও তো প্রশ্ন থাকতে পারে। কোন কেন্দ্রে কোন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা হবে, ঢাকার বাইরে হবে নাকি সবাইকেই ঢাকায় আনা হবে। আবার এত বড় একটি পরীক্ষার আয়োজন, প্রশ্নপত্র ফাঁস যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে প্রশ্নের নিরাপত্তা কীভাবে হবে? অনেক অনেক বিষয় আছে, যা এত অল্প সময়ে সম্ভব কি না তা নিয়ে আমি সংশয় প্রকাশ করি। তারপরও যেহেতু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আমি মনে করি দ্রুত সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একাধিকবার বসতে হবে, এক নীতিতে আসতে হবে, একমতে আসতে হবে, তাদের অনেক বিষয় পর্যালোচনা করে সমাধান করতে হবে।’

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও।

গত ২৩ জানুয়ারি ইউজিসির বৈঠকে অংশ নেয়া এক উপাচার্য পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটা ঠিক সিদ্ধান্তের বাইরে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। তবে আমরা আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই সবকিছু করা সম্ভব। আমরা ধাপে ধাপে মিটিং করব। যা যা করণীয় তা করব। সবার সহযোগিতা পেলে হাতে যে সময় আছে তার মধ্যেই পরীক্ষাটির সব আয়োজন সম্ভব।’

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের টেনশনের কিছু নেই। মেধাবীরা তার মেধা ও পছন্দের ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয় পাবে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য অনলাইনে একটি আবেদন করবে। সেখানেই তার এসএসসি ও এইচএসসিতে পাওয়া জিপিএ দেবেন। সে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছুক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কোন বিভাগে (বিজ্ঞান/মানবিক/বাণিজ্য) পড়াশোনা করেছে, কোন বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান...এভাবে) কত নম্বর পেয়েছে তা বিবেচনায় রেখে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মেরিট নির্ধারণ করেই তার বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিষয় নির্ধারিত হবে।’

প্রশ্নপত্র পদ্ধতি ও পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘এমসিকিউ পদ্ধতি বাদ দিয়ে এই পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ভিত্তিতে। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। কেন্দ্রগুলো হবে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্র ঠিক হবে। তবে কোনো কেন্দ্রে (বিশ্ববিদ্যালয়) ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পছন্দ এলে মেধার ভিত্তিতে (এসএসসি ও এইচএসসির ফল) কেন্দ্র ঠিক করা হবে। সব বিভাগে পরীক্ষার আয়োজন করতে দু-থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।’

এই পরীক্ষা কে আয়োজন করবে, কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে এসব প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এখন একসঙ্গে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবে।’

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল এই পদ্ধতি বাতিল করে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080878734588623