আইসিটি শিক্ষকের আত্মকথা - দৈনিকশিক্ষা

আইসিটি শিক্ষকের আত্মকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আমি আই সি টি শিক্ষক। আমার জন্ম বঙ্গবন্ধুর কন্যা, গণমানুষের নেতা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নকারী আমার প্রিয় নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের হাত ধরে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে। আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সন্তান, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র,  তরুণ প্রজন্মের অহংকার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অনুঘটক হিসেবে আমার জন্ম।

আমার জন্মের পর থেকে স্কুল কলেজে প্রযুক্তি সম্পর্কিত সকল কাজ করার দ্বায়িত্ব আমার। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনশীট, ভর্তি, বিভিন্ন ধরণের ফরম পূরণ, ল্যাবে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সমস্যা বা শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব সম্পর্কিত ডি সি অফিসে মিটিং, বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভা, আমার সহকর্মীদের ইনডোর ট্রেনিংসহ সকল জায়গায় গৌরবময় উপস্থিতি আমার।

প্রতিদিন আমি বাংলা, ইংরেজি শিক্ষকদের মত শ্রেনিকক্ষে পাঠদান করি, নিয়মিত দশটা-চারটা কলেজে উপস্থিতি, সবাই বলে কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, কত কাজ, সময় উপযোগী, কত প্রশংসা! চারিদিকে কত মাতামাতি আমাকে নিয়ে। আর আমি শুধু হাসি, কত সুখী আমি! আমি প্রশ্ন করি আমাকে, কী পাপ আমার? কী অপরাধ আমার? কেন আমাকে নিয়ে এত উপহাস? সবাই যখন মাস শেষে বেতন নিয়ে পরিবার নিয়ে ভালভাবে দু’বেলা খেতে পায়, তখন আমার ভাগ্যে জুটে কলেজ প্রদত্ত পাঁচ হাজার টাকা, আবার জুটেও না। কেন আমার বেতন নাই, কেন আমি অভুক্ত, আমার পরিবার, সন্তানেরা অভুক্ত?

একবার বরিশাল থেকে আমার এক সহকর্মী আমাকে ফোন করে বললেন, স্যার, এনটিআরসিএ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে আমাকে নিয়োগ দিয়েছে কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে এক টাকাও দেয় না। উল্টো বলে সরকার আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে, তারাই বেতন দিবে। আমি বরিশাল শহরে থাকি, আসা যাওয়ায় দু’শ টাকা খরচ, কী ভাবে চলি বলুন?

যে সরকার আমাকে সৃষ্টি করেছে তারা আমার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করার কথা । কিন্তু আজ পাঁচ বছরেও তারা আমাকে কিছুই দিতে পারেনি বা দিতে চায়না। সরকার বলে আমার বেতন কলেজ থেকে দেওয়া হবে কিন্তু কত দেওয়া হবে তা বলেনি । আর বললেও তা দেওয়া হয় কি না যাচাই করেনি। যেখানে এক কেজি চালের দাম ৫০ টাকা, আলু ২২ টাকা, এক কেজ়ি গরুর মাংস পাঁচশ টাকা, উপজেলা হেডকোয়ার্টারে দুই রুমের বাসা ভাড়া পাঁচ হাজার টাকা, গ্যাসের সিলিন্ডার এক হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল পাঁচশ টাকা, সেখানে আমি কলেজ প্রদত্ত পাঁচ হাজার  টাকা দিয়ে কীভাবে চলব?

আবার বাংলাদেশের সামাজিক পেক্ষাপটে আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনতে হয় আমি ননএমপিও  শিক্ষক, কলুর বলদ ইত্যাদি। সরকার আমাদের বেতন দেয় না শুধু খাটায়, আমাদের ভবিষ্যৎ নাই। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই বিষয় বন্ধ করে দেওয়া হবে আরও কত কী! তাদের মত যথা নিয়মে নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও আমি গেস্ট শিক্ষক, কলেজ থেকে এত বেতন দিয়ে রাখার দরকার কী?

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, পাঁচ বছর ধরে পাঁচ হাজার  টাকা বা তিন হাজার টাকায় চাকরির নামে সেবা প্রদান করে আসছি। বারবার আমার এমপিও নিয়ে কথা হলে আপনি বলেন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষকতা মহান পেশা ভেবে আমার কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়ের অনুপ্রেরণায় ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে কলেজে শিক্ষকতা করতে এসেছি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও আমাকে কলেজে যোগদান করতে না করেছিলেন। কিন্তু আমি বললাম, তুমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা রেখেছ। আর আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভালবেসে তাঁর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে চাই।

কিন্তু আজ আমি হতাশাগ্রস্ত, দিশাহারা ও দুঃখিত। কারণ বাবা-মায়ের চিকিৎসা, খাদ্য, ঔষধ বা তাদের সেবায় কোন ভূমিকা রাখতে পারছি না।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, পাঁচ বছর ধরে আপনি আমাদের এমপিও দিতে পারছেন না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে আপনার আর কত সময়ের প্রয়োজন? আমরা কি আদৌ এমপিও পাব? পেলে কবে নাগাদ পাব? যদি না পাই তাহলে বলে দেন, আমরা অন্য পেশা খুঁজবো। আমার সন্তান, পরিবার -পরিজ়নের মুখের দিকে তাকালে আমার খুব কষ্ট হয়। যদি এমপিও নাই দিবেন তবে শুধু আইসিটি কেন সকল এমপিও বন্ধ করে দিন। যদি এমপিও নাই দিবেন বা মাননীয় অর্থমন্ত্রী অর্থের যোগান নাই দিতে পারেন তবে প্রশ্ন, আমাকে কেন সৃষ্টি করলেন? যেহেতু করেছেন আমার জ়ীবন ধারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করুন না হয় গলা টিপে আমাকে হত্যা করুন। প্রমাণ করুন আমার সৃষ্টি ভুল ছিল।

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনারা আমাদের প্রতি দয়া করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের কথা বলুন। তিনি আমার আপনার আমাদের সবার অভিভাবক ষোল কোটি মানুষের নেতা। তিনি একবার বললেই এর সমাধান হয়ে যাবে। পরিশেষে বলি আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে , কষ্ট পেলে সন্তান হিসাবে ক্ষমা করবেন।

লেখক: মোঃ মোবারক করিম খান, প্রভাষক (আই সি টি), ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ।

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011010885238647