ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখি ভাতা নিয়ে স্বগত সংলাপ - দৈনিকশিক্ষা

ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখি ভাতা নিয়ে স্বগত সংলাপ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

আমি একজন বেসরকারি শিক্ষক। বেসরকারি  প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করি বলে ‘বেসরকারি’ শব্দটি আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে । এ জন্য অনেকে আমায় ‘বেদরকারি’ বলে উপহাস করে । কিন্তু, আমি মূলতঃ শিক্ষক এবং সরকারি শিক্ষকের চেয়ে আমার গুরুত্ব কোন অংশে কম নয় । বরং ক্ষেত্র বিশেষ অনেক বেশী । আমার বহু কষ্ট।’বৈশাখি ভাতা’ ও ‘ইনক্রিমেন্ট’ নিয়ে আজ আমার কষ্টকথা আপনাদের বলবো ।

এ আমার কোন উচ্চাশা কিংবা দাবী নয়- আমার ন্যায্য   অধিকার । বহু কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত আমার দু’টি একান্ত পাওনা । আমি খাঁটি বাঙ্গালি বলে ‘নববর্ষ ভাতা’ প্রাপ্য হই । বাংলা আমার মাতৃভাষা ।   বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি ।  বৈশাখ আমার নতুন বছরের প্রথম মাস । পহেলা বৈশাখ আমি আনন্দ উচ্ছাসে নববর্ষ উদযাপন করি । বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত হই । পান্তা ভাত খাই । সাধ্যে সব সময় সাধের ইলিশ কুলোয় না । তবু , দিনটি আমার হৃদয়ের বড় এক স্পন্দন । ‘ইনক্রিমেন্ট’ আমার রক্তের অধিকার । এটি আমার ঘাম ঝরা

পাওনা । কারো কাছে এ সব চেয়ে নেবার নয় । এ গুলো আমার  স্বয়ংক্রিয় পাবার কথা । আমার অধিকার অন্যের কর্তব্য । অন্যেরা কতটুকু তাদের কর্তব্য পালন করে ?

‘ইনক্রিমেন্ট’ যে কারো সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল , কর্মের স্বীকৃতি । পুরো বছরের শ্রমের পুরস্কার । গত বৈশাখে সকলে ‘নববর্ষ ভাতা’ পেয়েছে । আমি  পাইনি । গেল জুলাই মাসে অন্যরা ‘ইনক্রিমেন্ট’ পেয়েছে । আমারটার খবর নেই । আমি বেসরকারি শিক্ষক । জাতি গঠনের এক মহান কঠিন কাজে নিয়োজিত । বেসরকারি শিক্ষক হলে কী হবে ? কর্তব্য কাজ অন্যের চেয়ে কম নয় । দায়ভার আমার বহু । মানুষের সন্তানদের আমি আপন সন্তান বিবেচনা করি। তাদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য আমার যা যা করার সবই করি । জাগ্রত বিবেক আমার । অনেক সময় নিজের সন্তানের প্রতি ফিরে থাকাবার সময়টুকু মেলে না । বিবেকের তাড়নায় সবই করতে হয় । কিন্তু, আমার জন্য কারো বিবেককে এতটুকু তাড়িত হতে দেখি না । না হয় আমার ‘বৈশাখি ভাতা’ ও ‘ইনক্রিমেন্ট’ দিতে তাদের এতটুকু দায়ভার নেই কেন ?

জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার সে আরেক বড় সুনাম ‘বৈশাখি ভাতা’ প্রদান । কিন্তু, বেসরকারি শিক্ষকদের সেটি না দিয়ে এ অর্জনটিকে ম্লান করলো  কারা ? এদের কী শাস্তি হওয়া উচিত নয় ? অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে যারাই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে , তাদের সকলেই ‘বৈশাখি ভাতা’ পাবার কথা । বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও চাকুরীজীবির সেটা প্রাপ্য । অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে আমি বেতন পাই । পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত আপাদমস্তক বাঙ্গালী আমি। কিন্তু, কোন দোষে সেটি জুটলো না আমার ?

এক বৈশাখ পেরিয়ে আরেক বৈশাখ সমাগত । আমার এ মৌলিক অধিকার নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা আজো পরিলক্ষিত হয়না ।

সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না । আমাকে ও হয়তবা আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে । আরেক জুলাই মাস দ্রুত এগিয়ে আসছে ।   ইনক্রিমেন্টের ও খবর নেই । আমার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমাকেই লড়তে হবে । এ আমার অস্তিত্বের অঙ্গিকার।

আমি একা নই । পাঁচ লাখ সহযোদ্ধা আমার । তারা ও আমার মতো তাদের এ দু’টো অধিকার থেকে বঞ্চিত । সবার সে একই কষ্ট । কষ্টের যাতনায় সকলেই পিষ্ঠ আজ । তারা ও ক্রমশঃ জেগে ওঠেছেন । কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না কোনদিন -সে আমরা সকলে খুব ভাল বুঝে গেছি । এক কষ্ট দূর করার জন্য শত কষ্ট করতে হলে ও সে আমাদের করতেই হবে ।

 

লেখক  : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি - dainik shiksha আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037331581115723