নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন উঠিয়ে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করার জন্য। নৈর্ব্যক্তিক বাদ দিলেই কি প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়ে যাবে? মেধা মূল্যায়নের জন্য নৈর্ব্যক্তিক অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নৈর্ব্যক্তিক শিক্ষার্থীর চিন্তন দক্ষতা, অনুধাবন, প্রয়োগ দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক—যদি নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা যথাযথভাবে নেওয়া হয় এবং প্রশ্ন যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা করার কোনো সুযোগ নেই, শুধু কমন পড়া আর দেখাদেখি করে পরীক্ষা দিতেই তারা অভ্যস্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায়। নৈর্ব্যক্তিকের মাধ্যমে পুরো বই সমপর্কে শিক্ষার্থীর জানার পরিধি পরিমাপ করা যায়; কিন্তু রচনামূলক প্রশ্নের মাধ্যমে কয়েকটা মাত্র অধ্যায় থেকে প্রশ্ন করতে হয়। এ কারণে পুরো বই সমপর্কে শিক্ষার্থীর জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া রচনামূলক প্রশ্ন ফাঁস করা নৈর্ব্যক্তিকের চেয়ে আরো সহজ। তাছাড়া শুধু রচনামূলক প্রশ্নে পরীক্ষা হলে আবার নকলের যুগ ফিরে আসতে পারে। মূলত নকল বন্ধ করার অন্যতম লক্ষ্য ছিল নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের প্রচলন। বিশ্বের সব দেশেই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন প্রচলিত।
বিশ্বায়নের যুগে তাল মিলিয়ে চলতে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের প্রয়োজন রয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের বিন্দুমাত্র দেখাদেখির সুযোগ দেওয়া যাবে না। আসন বিন্যাস এমনভাবে হতে হবে যেন কোনোরকম দেখাদেখির সুযোগ না থাকে। পরীক্ষার হলে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। কেন্দ্র সচিব, কর্মকর্তা বসে বসে দেখবেন কোন হলে কী হচ্ছে। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করবেন বা শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষাগুলিতে শিক্ষার্থীরা নিজ জ্ঞানে দেওয়ার চেয়ে দেখাদেখি করে দিতেই অভ্যস্ত। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করার জন্য নৈর্ব্যক্তিক উঠিয়ে দেওয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয় বলে আমি মনে করি।
যে প্রশ্ন ব্যাংকের কথা বলা হচ্ছে সেটা নৈর্ব্যক্তিকের ক্ষেত্রেও হতে পারে। এক শ সেট প্রশ্ন থেকে পরীক্ষার দিন কেন্দ্র সচিবকে জানিয়ে দিতে হবে এক ঘণ্টা আগে। কেন্দ্রেই সেই প্রশ্ন প্রিন্ট করে পরীক্ষা নিতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি হলে প্রজেক্টরের মাধ্যমে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন শিক্ষার্থীরা সরাসরি পরীক্ষার হলে পাবে, কোনো ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না। কিন্তু এসব না করে নৈর্ব্যক্তিক বাদ দিয়ে দিলে সেটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থা ছাড়া আর কিছুই হবে না।
মুহাম্মদ মাসুম খান
সহকারি প্রধানশিক্ষক,
ডগাইর রুস্তম আলী উচ্চ বিদ্যালয়,
ডেমরা, ঢাকা