রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে এমপিওভুক্তির দাবিতে ননএমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের এক মাস গড়িয়েছে সোমবার (৯ জুলাই)। গত ১০ জুন থেকে প্রেসক্লাবের সামনে উত্তর পাশের সড়কে এমপিওভুক্তির দাবিতে লাগাতার অবস্থান নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরকার থেকে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ২৫ জুন থেকে তাঁরা আমরণ অনশন করছেন। এমনকি পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজও তারা রাজপথে আদায় করেন। সোমবার অনশনের ১৫ দিন অতিবাহিত করছেন শিক্ষকরা।
ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। আর এখন যে নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে তা হতাশাজনক। এ নীতিমালা অবৈধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত না হওয়ায় প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আমরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এরই মধ্যে আড়াই শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির ঘোষণা না আসা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান এ শিক্ষক নেতা।
এদিকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সোমবার সংহতি প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ। সোমবার সকালে নাগরিক সমাজের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অনশনরত শিক্ষকদের মাঝে এসে এ সংহতি প্রকাশ করেন। ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন শিক্ষা বার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা, ডি. এইছ. ই. এন এর সভাপতি অধ্যক্ষ (অব:) আবু সাইদ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যক্ষ (অব:) ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ রনজিৎ কুমার সাহা, এছাড়াও সিপিবি'র নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সংহতি প্রকাশ করতে আসা সংগঠনটির নেতারা বলেন, শিক্ষকদের দাবি যুক্তি সংঙ্গত। আমরা কোন দেশে বাস করছি যে দেশের শিক্ষা গুরুরা রাস্তায় থাকে আর আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না। অবিলম্বে আমরা তাদের এ দাবি সরকারকে মেনে নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, এর আগেও আমরা অনেকবার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলাম। কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি। তাই এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু এখনো তার কার্যালয় থেকে কোনো খবর আসেনি।দাবি দুটি হলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় এনে আংশিক বেতন চালু করে পরবর্তী অর্থবছরে তা সমন্বয় করা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত না হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য এমপিওভুক্তির পর তিন বছর সময় দেয়া।
অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, গত ১২ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চলতি ২০১৮-১৯ বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। যার ফলে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীর অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে সারাদেশের ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তি হলে সকলেই সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ি ফিরে যাবে।
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।