রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কলেজ শিক্ষিকা কৃষ্ণা কাবেরী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিল একমাত্র আসামি জহিরুল ইসলাম পলাশ। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালানোর পর তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ও হয়। হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর জানা গেল পলাশ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির জঙ্গি। জঙ্গি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে গত জুনে কলকাতায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে সেখানকার কারাগারে রয়েছে সে। সম্প্রতি ঢাকার গাবতলী থেকে নব্য জেএমবির তিন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট পলাশের বিষয়ে জানতে পারে মামুনুর রশিদ নামে সে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছিল।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে নিজের বাসায় খুন হয়েছিলেন বিআরটিএর কর্মকর্তা শুধাংশু শেখর রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী। পলাশ কি তখন থেকেই জঙ্গি ছিল নাকি ওই মামলায় গ্রেফতারের পর কারাগারে থেকে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, অথবা জামিনে গিয়ে জঙ্গি হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে কৃষ্ণা কাবেরী হত্যা মামলায় গত ৩ জানুয়ারি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির আদেশ দেন। অবশ্য তার আগেই গত বছরের এপ্রিলে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যায় সে। ফাঁসির ওই আসামিকে গ্রেফতারে আদালতের পরোয়ানা থাকলেও এখন জানা গেল সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ভারতের কারাগারে রয়েছে।
ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বুধবার গাবতলী থেকে শফিকুল ইসলাম ওরফে মোল্লাজি ও মোস্তফা হোসেন আরিফ ও আবদুল্লাহ নামে তিন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জহিরুল সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়। সিটিটিসি ইউনিটের ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৪ জুন নব্য জেএমবির চার জঙ্গি কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের (এসটিএফ) হাতে ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, শাহীন আলম ওরফে আল আমিন এবং মামুনুর রশিদ বাংলাদেশি।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানায়, জহিরুল কলকাতায় গ্রেফতার হওয়ার আগেই তারা তথ্য পাচ্ছিলেন যে, সে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। জঙ্গি মোল্লাজি ও আরিফের মাধ্যমে জঙ্গি দলে যোগ দেয় সে। তাদের মাধ্যমেই ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল। এরপর ভারতে নব্য জেএমবির সদস্যদের আশ্রয়ে থেকে জহিরুল জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে।
বুধবার ঢাকায় গ্রেফতার তিন জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসি কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, নব্য জেএমবির শাহিন আলম ওরফে আলামিন, জিয়াউর রহমান ওরফে মহসিন, কবির, আরিফ, হারুন ও জহিরুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে তারা চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতে যায়। সেখানে ঝাড়খন্ড, কেরালাসহ বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বোমা তৈরি ও অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত জুনে মহসিন, আলামিন ও জহিরুল পুলিশের হাতে ধরা পড়লে মোল্লাজি ও আরিফ বাংলাদেশে চলে আসে। এরপর তারা আব্দুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে নতুন করে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে।
সিটিটিসির ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারের পর ভারতে জহিরুলের (মামুনুর রশিদের) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই মামলার নিষ্পত্তি হলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। সিটিটিসি ইউনিট সেখানকার পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে।