চাঁদে এখন পর্যন্ত প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান পাননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এক গবেষণার অংশ হিসেবে চাঁদের বাসিন্দা হয়ে গেছে পৃথিবীর একটি প্রাণী—‘টার্ডিগ্রেডস’। ‘ওয়াটার বেয়ার’ বা পানির ভল্লুকও বলা হয় এদের। এক মিলিমিটারের চেয়ে কম দৈর্ঘ্যের প্রাণী যারা ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় যেমন টিকে থাকতে পারে, তেমনি শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
ইসরায়েলের একটি মহাকাশযান চাঁদে ভেঙে পড়লে তার ভেতরে থাকা সেই টার্ডিগ্রেডরা তখন চন্দ্রপৃষ্ঠে আটকে পড়ে। আর ওই ওয়াটার বেয়ারগুলোকে যে প্রতিষ্ঠান মহাকাশযানে রেখেছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের সহ-প্রতিষ্ঠাতার দৃঢ় বিশ্বাস যে, সেই দুর্ঘটনার পরও এখনো বেঁচে আছে টার্ডিগ্রেডগুলো।
ওয়াটার বেয়ারগুলোকে আর্দ্রতা শূন্য করে এমনভাবে সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয় যেন তাদের সহজেই পুনরুজ্জীবিত করা যায় এবং তারপর সেগুলোকে কৃত্রিম অ্যাম্বারের মধ্যে রাখা হয়। আর্চ মিশন ফাউন্ডেশনের প্রধান নোভা স্পিভ্যাক বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, টার্ডিগ্রেডগুলোর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক। এই ফাউন্ডেশন সাধারণত মানুষের জ্ঞান এবং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে সেগুলোকে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহে পাঠায়, যেন কোনো বড় বিপর্যয়ে পৃথিবীর সব প্রাণী একসঙ্গে হারিয়ে না যায়।
বেরেশিট রোবট ল্যান্ডার তাদের ‘লুনার লাইব্রেরি’ নিয়ে যাত্রা করে চাঁদের উদ্দেশ্যে। এই লুনার লাইব্রেরিকে একটি ডিভিডির সঙ্গে তুলনা করা যায়, যার মধ্যে পৃথিবীতে মানুষের ইতিহাসের ৩ কোটি পৃষ্ঠার একটি সংকলনের পাশাপাশি মানুষের ডিএনএ’র আর্কাইভও রয়েছে। আর ঐ যাত্রায় এই লাইব্রেরির সঙ্গে ছিল আর্দ্রতা শূন্য টার্ডিগ্রেডগুলো। অধিকাংশ প্রাণীকেই একবার পানি শূন্য করে ফেলার পর তাকে আর পুনরায় জীবিত করা সম্ভব হয় না, কিন্তু এই ওয়াটার বেয়ারগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। আর্দ্রতা শূন্য অবস্থায় কয়েক দশক থাকার পরও এগুলোকে জীবিত করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি টার্ডিগ্রেডদের একটি সুপার পাওয়ার।
শুকিয়ে যাওয়ার পর এরা মাথা এবং আটটি পা অনেকটা শরীরের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে ছোটো একটি বলে রূপান্তরিত করে এবং এমন একটি অবস্থায় যায় যার সঙ্গে মৃত্যুর তুলনা করা যেতে পারে। আর্চ মিশনের লুনার লাইব্রেরির জন্য তাদের যোগ্য প্রার্থী মনে করার আরেকটি কারণ, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে মহাকাশে টিকে থাকা একমাত্র প্রাণী ছিল এই টার্ডিগ্রেড।
নোভা স্পিভাক বলেন, টার্ডিগ্রেড এই লাইব্রেরির জন্য সেরা পছন্দ ছিল কারণ তারা অতি ক্ষুদ্র, বহুকোষী এবং পৃথিবীর বুকে থাকা সবচেয়ে টেকসই প্রজাতির প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি। -বিবিসি