রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নির্যাতনকারী সেই সভাপতি আওলাদ হোসেন অপসারিত হয়েছেন। টর্চার সেল বানিয়ে শিক্ষকদের নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হলে অপসারণ করা হয় আওলাদ হোসেনকে। সভাপতির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন ধরণের অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় সভাপতির টর্চার সেলের ভিডিও রিপোর্ট প্রকাশ হয়। তবে, স্থানীয় এমপি নির্যাতনের শিকার শিক্ষকদের শর্ত দিয়েছেন যে, অপসারণের পর আওলাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বা মন্ত্রণালয়ে বা শিক্ষাবোর্ডে আর কোনও অভিযোগ করতে পারবেন না শিক্ষকরা। অতি গোপনে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন আওলাদ। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা সভাপতির বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ করবেন না এমন শর্ত দেয়ার পর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন আওলাদ হোসেন। সভাপতির পদত্যাগে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা ও কর্মচারীরা। এদিকে সভাপতির অপসারণের খবরে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, প্রকাশিত ভিডিও এবং রিপোর্টটির মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সারাদেশের শিক্ষক সমাজ নির্যাতনকারী সভাপতির দুর্নীতির খবর জানতে পেরেছেন। ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন
গত ৯ ডিসেম্বর (সোমবার) রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে আওলাদ হোসেনের অপসারণ ও নতুন সভাপতি মনোনয়ন দাবিতে মানবন্ধন করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এসময় অভিযোগ করে বলেন, ‘শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও কথায় কথায় বরখাস্ত করেন। প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন সভাপতি।’ মানববন্ধনে শিক্ষকরা কয়েকজন শিক্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সভাপতির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন তারা। শিক্ষকরা বলেন, সভাপতি ঢাকায় চারটি বাড়ি করেছেন যদিও তার কোনও বৈধ আয় নেই।
৯ ডিসেম্বর মানববন্ধনে শিক্ষকরা বলেছিলেন, ‘প্রায় ১১ বছর ধরে আওলাদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের পদে থাকায় ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চান না অনেক শিক্ষক-কর্মচারী। সভাপতি স্কুলের ভেতরে একটা টর্চার সেল তৈরি করেছেন। যেখানে ঢোকার সময় মনে হবে বেহেশতখানায় ঢুকছেন কিন্তু বের হওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে বের হতে হয়।’
প্রশ্নফাঁস, কোটি কোটি টাকার কেনাকাটা, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়মের বেশ কিছু অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই। বছরের পর বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি; আবার অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। এসব পদেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের যখন খুশি তখন পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।
আর এসব কারণে একসময়ে ভালো ফল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এসএসসি পরীক্ষার ফল ধারাবাহিকভাবে খারাপ হয়েছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ (‘এ’ প্লাস) পেয়েছিল ১ হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী। সেটা প্রতিবছর কমতে কমতে চলতি বছর জিপিএ-৫ পায় ২২৫ জন। যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শামসী দাবি করেন, আশপাশে একাধিক ভালো প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে একপর্যায়ে চলে যায়। এরপরও তাঁরা ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মানববন্ধনে একটি নতুন ভবনের কাজে ১ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ করেন। পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার প্রায় ৮০ লাখ সভাপতিকে দিতে হয়। অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা মতিঝিল কলোনিতে অবস্থিত, আরেকটি শাখা ক্যাম্পাস বাসাবো এলাকায়। বর্তমানে ১১ হাজার বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে।