দৈনিক শিক্ষায় সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে প্রবেশপত্র পেয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে বাড্ডা হাইস্কুলের সেই মাতৃহীন পরীক্ষার্থী ডানা চিসিম। দৈনিক শিক্ষাডটকমে শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটায় ‘টাকা দিতে না পারায় জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দিলো বাড্ডা হাইস্কুল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে তা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নজরে আসে। এর কিছু সময় পর মাতৃহীন অসচ্ছল পরিবারের শিশুটির জেএসসি পরীক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত সংবাদটি শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আসে এবং যে কোনোভাবেই হোক ওই পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দেয়া এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী মহোদয়।’ ‘মন্ত্রীর নির্দেশটি সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোছা. কামরুননাহারকে জানিয়েছি।’’
এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সাভারের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. কামরুন্নাহার বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ পেয়েছি। শনিবার সকালেই পরীক্ষার্থীকে বাসা থেকে নিয়ে পরীক্ষার হলে দিয়ে এসেছি। প্রবেশপত্র দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: সেই মাতৃহীন পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দেয়ার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর
টাকা দিতে না পারায় জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দিলো বাড্ডা হাইস্কুল
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন ডানা চিসিমের বাবা প্রবেশপত্র না দেয়ার অভিযোগটি নিয়ে ইউএনওর কাছে যান তখনই খবরটা প্রথম জানতে পারি। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ইউএনও সাহেবও চেষ্টা করেন। গুড সয়েল কিন্ডার গার্টেনের একজন শিক্ষককে পাই রাত নয়টার দিকে। তাকে যখন চার্জ করি কেন টাকার জন্য প্রবেশপত্র আটকে রেখেছেন? তখন ওই শিক্ষক জানান, ‘টাকার জন্য নয়, ছেলেটি বেয়াদবি করেছিল।’ কি বেয়াদবি করেছে? এবং একটি শিশুকে বেয়াদবির জন্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করবেন?
শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘রাত বারোটার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা টেলিফোনে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশের কথা জানতে পারি।’
জানা যায়, সাভার পৌরসভা এলাকার বাড্ডা হাইস্কুল থেকে পরীক্ষর জন্য ফরম ফিলাপ করেছে ডানা চিসিম। বাড্ডা স্কুলের কেউ প্রবেশপত্র নিয়ে কথা বলতে রাজী নয়। তারা দায় চাপাচ্ছে গুড সয়েল স্কুলের ওপর।
জানা যায়, দশ হাজার টাকার জন্য ডানা চিসিমের জেএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে দিয়েছিল স্কুল। এতে পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলো মাতৃহীন এ পরীক্ষার্থীর। সাভার পৌরসভা এলাকার বাড্ডা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত অভিযোগ। তার অভিভাবকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। কোনও উপায় না দেখে দৈনিক শিক্ষার কাছে টেলিফোনে অভিযোগ করেন ছাত্রটির অভিভাবক।
সাভার এলাকার কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিশ/ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে জেএসসি/এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয় বাড্ডা হাইস্কুল। গত এসএসসি পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঘুষ দিয়ে এবার একটি শাখা এমপিওভুক্তও করা হয়েছে বাড্ডা স্কুলের। দুটি মাত্র ভবন এই স্কুলের। অথচ পরীক্ষার সময় এত ছাত্র কীভাবে কোথা থেকে আসে সেই প্রশ্ন তোলে না ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
তবে, শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে বাড্ডা হাইস্কুলের একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, মাতৃহীন ডানা চিসিম মূলত পিসির কাছে বড় হয়। বাবা আর্থিকভাবে অসচ্ছল।