সমন্বিত ভর্তির ব্যাপারে আরও ভাবা প্রয়োজন - দৈনিকশিক্ষা

সমন্বিত ভর্তির ব্যাপারে আরও ভাবা প্রয়োজন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যাপারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জোর দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বিষয়টি প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে। গত ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যদের ইউজিসির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। যদিও এ ব্যাপারে এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সিদ্ধান্ত নেয়নি। যেহেতু রাষ্ট্রপতি বিষয়টি চাইছেন এবং ইউজিসিও উদ্যোগ নিয়েছে- সে জন্য বিষয়টি আমরাও যে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি না, তা নয়। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য যানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, বিষয়টি যখনই সামনে আসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের ডিন হিসেবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় আমার অংশগ্রহণ রয়েছে। আমাদের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ডিনের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর ইমেরিটাস নাজমা চৌধুরীসহ বিশিষ্ট অনেকেই ছিলেন। সেখানে সবাই খোলাখুলি মতামত প্রদান করেন। রফিকুল ইসলাম স্যারের কথা ধরেই বলি। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আমাদের স্বায়ত্তশাসন দেন। সে আদেশবলে আমাদের কোনো কিছু পরিবর্তন করতে হলে একাডেমিক কাউন্সিলে পাস করেই সেটি করতে হবে। তার আগে আমরা কিছু করতে পারি না। একই সঙ্গে এটাও দেখতে হবে, বিষয়টি কতটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে যায়। সমন্বিত পদ্ধতি আদৌ বিশ্ববিদ্যলয়ের স্বাতন্ত্র্যে সহায়ক কিনা তাও দেখতে হবে।

এটা সত্য যে, সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি মেডিকেলে হচ্ছে। সেটা হতেই পারে। এমনকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন রুয়েট, চুয়েট, কুয়েটসহ অন্যরাও চাইলে একত্রে করতে পারে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তো ইতোমধ্যে সমন্বিত পদ্ধতির ভর্তি চালু হয়েছে। তারা সেটা করতে পারে কাছাকাছি বিষয়ের কারণে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বৈচিত্র্য। আগে বিভাগকেন্দ্রিক পরীক্ষা হতো, এখন পরীক্ষা হয় অনুষদভিত্তিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ঘ ইউনিটের অধীনেই কয়েকটি অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় পঞ্চান্নটি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ রকম খ ইউনিটর অধীনে কলা, সামাজিকবিজ্ঞানসহ প্রায় দশটি অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় চল্লিশটি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একইভাবে ক ইউনিটে অনেকগুলো অনুষদ ও ইনস্টিটিউট মিলে পরীক্ষা হয়, সেখানেও বিষয় সংখ্যা ত্রিশের অধিক। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অনেকগুলো ইউনিটে পরীক্ষা হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এগুলোর সমন্বয় খুব সহজ বিষয় নয়। বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও জটিলতা বাড়বে বৈ কমবে না।

তার চেয়ে বড় বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বহু নির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) পাশাপাশি থাকছে লিখিত পরীক্ষা। এত দিন শুধু এমসিকিউর মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হতো। উভয় পদ্ধতির পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই সহজ হয়। একজন শিক্ষার্থীর বেসিক বা ভিত্তি কতটা সবল বা দুর্বল, তা এ পদ্ধতিতে চিহ্নিত হয়। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার মান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে, লিডিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদের আন্তর্জাতিক মানের ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী যে প্রশ্ন প্রণয়ন করবেন, স্বাভাবিকভাবেই তা উচ্চপর্যায়ের হবে। দেশে সরকারি ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোতে পড়াচ্ছেন আমাদের শিক্ষার্থীরাই। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে নতুন, সেগুলোকে সমন্বিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হলে মানের বিষয়টি আসবেই। তাছাড়া বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই স্বাতন্ত্র্যবোধ আছে। নিজস্ব অগ্রাধিকার, পদ্ধতি রয়েছে। এমআইটি, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড বলা যাক। কিংবা আমি কানাডার যে ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি, আমি তাদের নিজস্ব শর্তাবলি, নিয়ম-কানুন মেনেই ভর্তি হয়েছি। এখানে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি আলাদা।

সমন্বিত ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের খরচের ব্যাপারটা আছে। সেটা ঠিক আছে। সেজন্য অন্য কিছু করা যায় কিনা। এর বিকল্প কোনো সমাধান আছে কিনা সেটা আমরা ভাবতেই পারি। তার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা নষ্ট করে নয়। ইউজিসিতে কেবল উপাচার্যদের ডাকা হয় বা উপাচার্যদের সভাতেই সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত হলো। কথা হলো, উপাচার্যরা কিন্তু সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সঙ্গে জড়িত নন। কিংবা বলা যায়, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির খুঁটিনাটি বিষয়াদি জানার কথাও নয়। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মতো বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সেখানে অবশ্যই ডিন ও ভর্তি কমিটির শিক্ষকদের নিয়ে পরামর্শ করা উচিত। ফলে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ে এখনও বিশদ কাজ করার অবকাশ আছে। এ নিয়ে সংশ্নিষ্ট প্রত্যেক অংশীজনের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে কথা বলা দরকার। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সভা, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করা প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যেকের মতামত নিয়েই তার বাস্তবায়নে যাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীবান্ধব সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা, তবে...

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবির মিশ্র প্রতিক্রিয়া

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে দুই দিন, আবেদন ১০টিতে

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবি শিক্ষকের যত যুক্তি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় প্রাপ্তিতে মেধাই ভিত্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আগামী বছর থেকে

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে চার বিশ্ববিদ্যালয়কে পরামর্শ দিল ইউজিসি

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নতি স্বীকার নয়

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তি কমবে : শিক্ষামন্ত্রী

উচ্চশিক্ষার এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক দিক বিবেচনা করবে- এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেবল উচ্চশিক্ষায়ই অবদান রাখছে না বরং দেশের সব ক্রান্তিকালে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যে কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের মনোভাব ছিল কঠোর। ১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা আইনে তাদের সেই মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। যেটাকে কালাকানুন বলে প্রত্যাখ্যান করে ছাত্র-শিক্ষকরা প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন। তারই পথ ধরে আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হলো ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতেন বলেই তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। তারই আলোকে যে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট/অধ্যাদেশ-১৯৭৩ মহান জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় তার প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই দায়বদ্ধ থেকেছে। ফলে বঙ্গবন্ধুর সে অধ্যাদেশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ভাবার বিষয় রয়েছে।

সর্বোপরি, আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে যেমন শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা ভাবতে হবে, একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও ভাবার বিষয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান, গবেষণা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে উচ্চশিক্ষার যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

লেখক: সাদেকা হালিম, ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034739971160889