শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে হেকেপ প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এর মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষায় স্বল্প খরচে সহজেই ক্যান্সার রোগ শনাক্তকরণ, গবাদি পশুর খুরা রোগের ভ্যাকসিন তৈরি, মাটি পরীক্ষায় সয়েল টেস্টিং কিটসহ দেশে নতুন নতুন আবিষ্কার ও বড় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। তাই এই প্রকল্পের অনেক অর্জন। দশ বছরে হেকেপের অর্জন বিষয়ে বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত জাতীয় অবহিতকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
হেকেপ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উচ্চশিক্ষা অনেক এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষা সচিব আরো বলেন, আমাদের দেশের গবেষকদের আবিষ্কারগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। বছর তিনেক অগেও বিশ্বব্যংকের দৃষ্টিতে হেকেপ একটি দুর্বল প্রকল্প ছিল। তবে, সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন ঢাকায় এসেছেন তারা একে সফল প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করেছেন। প্রকল্পের অর্জনগুলো নিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিগত বছরগুলোতে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কিন্তু কম নয়। এ অর্জনগুলো ধরে রাখতে হবে। গবেষক-শিক্ষকরা আমাদের পথ দেখাবেন মন্তব্য করে সচিব বলেন, দেশের উন্নয়ন গবেষক-শিক্ষকদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তারা আমাদের যে পথে এগিয়ে নেবে আমরা সে পথে ধাবিত হব। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের সারিতে দাঁড় করাতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহামুদ-উল-হক, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লাহ এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ড. মো. মোখলেসুর রহমান। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. গৌরঙ্গ চন্দ্র মোহন্ত। হেকেপ প্রকল্পের ১০ বছর পূর্তি ও মেয়াদ শেষ হওয়ায় এর অর্জন বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। আমাদের কোনো প্রকল্পই এক বছর হাতে রেখে কাজ শেষ করতে পারেনি। উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প সাফল্যের সাথে মেয়াদ শেষ হবার আগেই ৯০ শতাংশের বেশি কাজ করতে পেরেছে। এসময় হেকেপ প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গবেষকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। সেইসাথে দেশের কল্যাণে আরও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ করে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় ৩৮ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪২ শতাংশ। এ সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
উচ্চ শিক্ষায় গবেষণার সুযোগ সৃষ্টিতে গত ১০ বছর ধরে কাজ করছে উচ্চ শিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প (হেকেপ)। আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে ২ হাজার ৫৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ। এ প্রেক্ষিতে হেকেপের অর্জন বিষয়ক জাতীয় অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। হেকেপ প্রকল্পের অর্থায়নে ১৯টি গবেষণা কর্মের পেটেন্ট আবেদন করা হয়েছে।