দৈনিক শিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ধরে পদত্যাগ করেছেন অশ্লীল ভিডিওর সাথে জড়িত আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালেয়ের দুই শিক্ষক। অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে, দৈনিক শিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশ ও ফেসবুক লাইভে প্রচারের পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষক মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করা একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অশ্লীল ভিডিওটির বিষয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এদিকে, আহছানউল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. কাজী শরিফুল আলমের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। অবৈধভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্বেচ্ছাচারীভাবে পরিচালনা করছেন ড. কাজী শরিফুল আলম। এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবারও করবেন। তাদের নয়দফা দাবি রয়েছে।
এছাড়া অনৈতিক কাজে লিপ্ত দুই শিক্ষককে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বরখাস্ত অথবা বহিষ্কার না করায় বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। অভিভাবকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মন্তব্য করেছেন, ‘এমন ঘৃণ্য কাজের পরও তারা কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকেন?’ তবে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অভিভাবক ও ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলমের মতে বিষয়টি ‘নিতান্তই ব্যক্তিগত’ এবং একপক্ষ থেকে অভিযোগ আসা একটি ঘটনা মাত্র। গত ২৪ অক্টোবর রাতে দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত ভিসি।
আরও পড়ুন:
আহছানউল্লাহর শিক্ষক-শিক্ষিকার পর্ন ভিডিওতে তোলপাড়
দৈনিক শিক্ষার রিপোর্টের পর আহছানউল্লাহর কনভোকেশনে যাচ্ছেন না শিক্ষামন্ত্রী
আহছানউল্লাহর ভারপ্রাপ্ত ভিসি স্বাক্ষরিত অকার্যকর সনদের কনভোকেশন রোববার
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিসির কাছে সিডিতে পর্ন ভিডিওর কপিসহ লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে একমাস করে ছুটি দেয়া হয়।
মঙ্গলবার দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে পদত্যাগ করা একজন শিক্ষক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করতে হল।’
এর আগে শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন পর্ন তৈরিতে অভিযুক্ত নারী শিক্ষকের স্বামী। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে তার বাসার গেটে একটি সাদা খাম দেখতে পান। খাম খুলে দেখা যায় একটি সিডি। সিডি চালিয়ে দেখেন তার শিক্ষক স্ত্রী অপর এক পুরুষ লোকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পুরুষ ওই লোকটি আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক।
অপর এক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে, অভিযুক্ত পুরুষ শিক্ষকের স্ত্রীও ওই ভিডিওটি দেখেছেন এবং সত্যতা যাচাইয়ের পর তার শিক্ষক স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। পর্ন ভিডিওতে অভিযুক্ত নারী শিক্ষক আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার আগে বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বলে জানা যায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট। জানা যায়, অভিযুক্ত নারী শিক্ষকও কয়েকদিন আগে তার স্বামীকে তালাকনামা পাঠিয়ে দেন। আর অভিযুক্ত পুরুষ শিক্ষকটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলম গত ২৪ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের হাতেও এসেছে। বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত এবং তদন্ত ছাড়া কিছু বলা যাচ্ছে না।’ ভারপ্রাপ্ত ভিসি আরও বলেছিলেন, ‘অনৈতিকতার প্রশ্ন আসে না। বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত। একপক্ষ অভিযোগ করেছে মাত্র। নৈতিক-অনৈতিক কীভাবে বলি?’
এদিকে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিযুক্ত ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলেও কনভোকেশন ডাকার খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে আহছানউল্লাহর গ্রাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অনিয়মিত ব্যক্তি থাকার খবরে অবাক হয়েছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। গতকাল দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২৭ অক্টোবরের কনভোকেশনটি স্থগিত করা হয়। কবে হবে তা অনিশ্চিত।
জানা যায়, গত আগস্টে নিয়মিত ভিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত ভিসি পদে আছেন ড. কাজী শরিফুল আলম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. কাজী শরিফুল আলমের চ্যান্সেলর কর্তৃক ভিসি নিযুক্ত হওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ, তিনি বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের। আর বিধান অনুযায়ী এই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রযুক্তি অথবা বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ডের অধ্যাপককে ভিসি নিয়োগ করতে হবে।
গতকাল সোমবার এবং মঙ্গলবার দিনভর আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। ভিসির পদত্যাগসহ নয়দফা দাবি রয়েছে তাদের। আন্দোলনকারীদের সাথে বুধবার সকালে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।