পূর্ণাঙ্গ আবাসন সুবিধার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় ৪৩ বছর আগে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। এর বাইরে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে যথাক্রমে ২২ ও ২৪ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে থাকতে হচ্ছে। নিরাপত্তাঝুঁকিসহ নানা সমস্যা নিয়ে মেসে থাকছেন তাঁরা।
ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের বেগ পোহাতে হয়। নির্ভরশীল থাকতে হয় পরিবহনের ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ হাজার ৬৮৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। হল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট আটটি আবাসিক হলের আসনসংখ্যা তিন হাজার ৩৫৫, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ছাত্রের জন্য পাঁচটি হলে আসনসংখ্যা দুই হাজার ২০। বাকি ছয় হাজার ছাত্রীর জন্য তিনটি হলে আসন এক হাজার ৩৩৫টি। এর মধ্যে ছাত্র হলগুলোর সিট ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকায় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ছাড়া সিট মেলে না বলে অভিযোগ আছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাগজে-কলমে আবাসিকতা পেলেও সিটে উঠতে পারেন না।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলে থাকার সুযোগ না পেয়ে নানা ঝুঁকি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সত্ত্বেও বিভিন্ন মেস ও বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে উচ্চ ভাড়ার জন্য বিপাকে পড়ছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়ছেন ছাত্রীরা। অন্য সমস্যাগুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তা শঙ্কা নিয়ে থাকতে হয় তাঁদের। গোসলখানায় আপত্তিকর ভিডিও ধারণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। মাঝেমধ্যেই স্থানীয়দের হয়রানির শিকার হচ্ছেন মেসে থাকা ছাত্রীরা। মেসে থাকা ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় ও মেস মালিকদের মারামারির ঘটনাও ঘটে।
জানা যায়, আসনসংকটের জন্য প্রতিটি হলেই রয়েছে গণরুম। এসব কক্ষে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকছেন। ছাত্রী হলগুলোতে এই সংখ্যা বেশি। খালেদা জিয়া হলে ৩৯৬টি আসন থাকলেও হলটিতে সাত শতাধিক ছাত্রী অবস্থান করছেন। হলটির বড় হলরুমে একসঙ্গে ৮০ জনের বেশি ছাত্রী থাকেন বলে জানা গেছে। অন্য দুটি ছাত্রী হলের চিত্রও একই। চারজনের কক্ষে ১৬ জন করে থাকছেন। এতে পড়ালেখা ও প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, ‘আসনসংখ্যা কম হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেককে গণরুমে রাখতে হচ্ছে। যদিও তাদের অন্যদের মতো সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না। সংকট কমাতে নতুন হল প্রয়োজন। ’
জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আবাসনসংকট পুরোপুরি কাটানো সময়সাপেক্ষ বিষয়। মেগাপ্রকল্পের অধীনে দুটি ছাত্র হল ও একটি ছাত্রী হল নির্মাণ হচ্ছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। তখন সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। এখন আপাতত হল প্রশাসনকে আবাসিকতাপ্রাপ্তদের সিটে তুলে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।