নতুন শিক্ষাক্রমে সৃজনশীল প্রশ্নের জায়গা নেই - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমে সৃজনশীল প্রশ্নের জায়গা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে বিদ্যমান সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চিন্তিত হয়ে পড়ছেন অবৈধ নোট-গাইড প্রকাশকরা। উদ্বিগ্ন হয়ে তারা তাদের অনুগত কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন মর্মে খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি বেসরকারি টিভি ও জাতীয় পত্রিকায় এই সৃজনশীলের পক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করাবেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলানো হবে, সৃজনশীল পদ্ধতি বাতিল করার অন্তত দুই বছর আগে থেকে যেন ঘোষণা দেওয়া হয়। বিদ্যমান সৃজনশীল পদ্ধতিতে কয়েক হাজার কোটি টাকা নোট-গাইড বই ছাপানোসহ লেখক-সম্পাদকদের নিয়ে বিশাল এক যজ্ঞ। নতুন পদ্ধতি আসলে তাদের কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত। নতুন পদ্ধতিতে নোট-গাইড ছাপানোর প্রস্তুতির জন্য সময় পাওয়া নিয়ে চিন্তা তাদের। 

২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মাধ্যমিক স্তরে চালু করা হয়েছিল 'সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি'। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কারোরই তখন ভালো করে জানা ছিল না এ পদ্ধতির বিষয়ে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে চালু করা এই পদ্ধতি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল। পাবলিক পরীক্ষার ফলও খারাপ হয়েছিল। চালুর ১১ বছরের মাথায় এসে আবার নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা করা হয়েছে। এতে আর সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির বিষয়ে কোনো কিছু বলা নেই। শিক্ষকরা বলছেন, ধারণা করা যাচ্ছে, এ পদ্ধতি আর থাকছে না।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা চূড়ান্ত হলো। এখনই সৃজনশীল প্রশ্নের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে আরও সভা করে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি বড় কোনো বিষয় নয়। কোনো শিক্ষার্থীর যদি বিষয়বস্তু জানা থাকে, তবে আপনি যে ফরম্যাটেই প্রশ্নটি করুন না কেন, সে তাতে উত্তর দিতে সমর্থ হবে। এটি খুব জরুরি নয় যে প্রশ্নের চারটি অংশ দিয়ে জ্ঞান, দক্ষতা ও উচ্চতর দক্ষতা সব ক্ষেত্রে যাচাই করা লাগবে।

এনসিটিবিতে শিক্ষাক্রম তৈরির কাজে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি আদতে থাকছে না। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন অংশেও সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে মূল্যায়নের কোনো ধারণা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা যুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে মূল্যায়নেও পরিবর্তন আসছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ জিপিএ পয়েন্ট ৫-এর পরিবর্তে ৪ করা হচ্ছে।

দেখা গেছে, পড়াশোনার নতুন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষাক্রম অনুমোদন দেওয়া হলেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে খুব একটা কথা বলা হচ্ছে না। গত ১০ বছরে সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও
আজ পর্যন্ত ওই পদ্ধতি আয়ত্তে আনতে পারেননি হাজার হাজার শিক্ষক। এর ফলে সৃজনশীল পদ্ধতিও নোটগাইড নির্ভর হয়ে পড়েছিল। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার আগে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কীভাবে দেওয়া হবে। যদি ঠিকঠাকমতো শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া হয়, তাহলে পড়াশোনার নতুন এই পদ্ধতিও কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ক্লাসরুম অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়নের যে ধারণার কথা বলা হচ্ছে, তা আধুনিক। এর ফলে তো আর সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির কোনো প্রয়োজনই থাকছে না। কারণ শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে কাজটি করে নিজে নিজে শিখবে। তাই পরীক্ষার খাতায় লিখে সেটা তার বোঝানোর আর প্রয়োজন পড়ছে না। সংগত কারণেই বোধ করি শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্নপদ্ধতি নতুন শিক্ষাক্রমে রাখেননি।
তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল বৈদেশিক ঋণের টাকায় পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। মাত্র ১০ বছরেই এ পদ্ধতি অকার্যকর প্রমাণিত হলো।

মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল চালুর পর প্রাথমিক স্তরেও একই আদলে চালু করা হয়েছিল 'যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন'। সেটিও থাকবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন সদস্য বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম পুরোটিই যোগ্যতাভিত্তিক। শিক্ষকরা ক্লাসরুমে কোনো বিষয়ে পাঠদান শেষ করে সে বিষয়ে ছোট ছোট দলে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের কাজ দেবেন। শিক্ষার্থীরা তা করবেন এবং এর ভিত্তিতে শিক্ষক ক্লাসেই তাদের গ্রেডিং করবেন। ক্লাসে সবার সামনে সঙ্গে সঙ্গেই মূল্যায়ন করায় এর ফল পরে পরিবর্তন করতে পারবেন না।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ১০২টি দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করে দেশে নতুন এই শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শিক্ষা প্রশাসন থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীও এ সময় সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি নিয়ে কিছু বলেননি। 

 

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035610198974609