প্রসঙ্গ নতুন শিক্ষাক্রম - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ নতুন শিক্ষাক্রম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুকে এই ঝরের তিব্রতা ছিল ভয়াবহ। ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ, কোচিং ব্যবসায়ী, ব্লগার, টিকটকার থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষজন যার যার ইচ্ছেমতো মতামত দিচ্ছেন। এর মধ্যে বড় একটা শ্রেণি ফেসবুকে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের আশায় মনগড়া তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আর আমরা কিছু মানুষ সেটা না বুঝে, সত্যতা যাচাই না করে তা শেয়ার করছি।

যেমনটা দেখা গেল ভারতের শিক্ষক প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও কিরিং কিরিং সাইকেল চলে যা আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমের ট্রেনিং বলে শেয়ার করা হয়েছে। এই ভিডিওকে কেন্দ্র করে অনেকেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় এবং একটা বড় প্রশ্নের জায়গা হলো, যারা নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন কিংবা ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করছেন, তাদের মধ্যে কয়জন নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ধারণা রাখেন? তাদের মধ্যে কয়জন নতুন শিক্ষাক্রম পড়ে দেখেছেন?

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সবাই জানেন যে, ২০২১ সালে আমাদের শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন নয়, বরং কিছু কিছু জায়গায় সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে এর পরিমার্জন করা হয়েছে। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (NCTB) একটি নিয়মিত কার্যক্রম। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ২০১২ সালেও শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছিল আর সর্বশেষ ২০২১ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা- ২০২১ নামে প্রকাশ করা হয়। শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জনের পর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় আর এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সাল থেকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১ম শ্রেণি, ষষ্ঠ শ্রেণি ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন বই দেওয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে ১ম-১২শ শ্রেণিতে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। সবার মনেই শিক্ষাক্রম নিয়ে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আর তা হলো- নতুন শিক্ষাক্রম কেন পরিমার্জন করা হলো? এমনকি শিক্ষকদেরই বলতে শুনেছি- এত পরিবর্তনের কী আছে? যেভাবে চলতেছে চলুক না! 

জীবন বদলায়, সেই সঙ্গে বদলায় প্রয়োজন ও চাহিদা। প্রয়োজন আর চাহিদার নিরিখে বদলায় আমাদের চারপাশ। বদলে যাওয়া চারপাশের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে বদলায় আমাদের পরিকল্পনা ও ভাবনা। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর দেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে এখন হাতে হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সরব উপস্থিতি, বাজার ব্যবস্থার পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতা, কৃষিভিত্তিক থেকে শিল্পায়নের দিকে ঝোঁক আর অর্থনৈতিক গতিশীলতা সর্বত্র স্পষ্ট। বর্তমান পৃথিবী আর্টফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রৌবটিক্স, ন্যানো টেকনোলোজি, প্রোগ্রামিং আর টেকসই অর্থনীতির হাতে। পৃথিবীব্যাপী এই বিশাল পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আমরা কতটা প্রস্তুত? সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলাতে নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।  

এই উদ্দেশ্যে শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপণের জন্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা এবং কারিগরি অনুশীলন পরিচালিত হয়। তারই ওপর ভিত্তি করে প্রেক্ষাপট, প্রয়োজন এবং নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো যোগ্য প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে এসডিজি বাস্তবায়ন, নতুন প্রজন্মকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করা ও প্রযুক্তিনির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দক্ষতা অর্জন করার নিমিত্তে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়েছে। অথচ আমাদের যত ভয় এই পরিবর্তনকে নিয়ে! 

লেখক: জালাল আহাম্মদ রুদ্র, শিক্ষা উন্নয়ন কর্মী

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047471523284912