বিনা বেতনে অবসরে গেলেও ছাড়তে পারেননি মাদরাসার মায়া - দৈনিকশিক্ষা

বিনা বেতনে অবসরে গেলেও ছাড়তে পারেননি মাদরাসার মায়া

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি |

২০০২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেন তিনি। বেশ সুনামের সঙ্গেই চাকরি জীবন শেষ করেছেন। পুরো চাকরি জীবনে পাননি বেতন পাওয়ার আনন্দ। বিনা বেতনেই শিক্ষকতা করেছেন পুরোটা সময়।  

১৮ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিলেও আজ অবধি রোজ মাদরাসায় আসেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ন্যায় মাদারাসাটিও তবুও আব্দুল মান্নান মাস্টার থেমে নেই। এখনো সারাক্ষণ থাকেন মাদরাসাটিতে।

জানা যায়, ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে একমাত্র ফুরকানীয়া মাদরাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ‘চিথলিয়া ফুরকানীয়া মাদরাসা’। প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে ওই মাদরাসায় যোগদান করেন আব্দুল মান্নান। সেখান থেকেই শুরু হয় আব্দুল মান্নানের শিক্ষকতা জীবন। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে চিথলিয়া ফুরকানীয়া মাদরাসাটি এবতেদায়ী মাদরাসা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। আব্দুল মান্নান ক্বারী শিক্ষক হিসেবে বেশ সুনামের সঙ্গে চাকরি করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিক্ষক ওই মাদরাসা থেকে অবসর নেন। .এরপর ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে চিথলিয়া মাদরাসাটি দাখিল মাদরাসা হিসেবে অনুমতি এবং ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসাটি স্বীকৃতি পায়। সর্বশেষ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ০১ জুলাই মাদরাসাটি এমপিও ভুক্ত হয়। বর্তমানে মাদরাসাটিতে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। ১৭ জন শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন। মাদরাসাটিতে প্রায় এক একর নিজস্ব জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও পড়ে রয়েছে অবহেলায়। শ্রেণি কক্ষে নেই শিক্ষার্থীদের বসার পরিবেশ। বৃষ্টি হলেই টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষকতা থেকে আব্দুল মান্নান অবসর নিলেও মাদরাসাটির মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি। বর্তমানে তিনি ওই মাদরাসার সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্লাস নেন খণ্ডকালীন। বেতন ভাতা কিছুই চাননা তিনি। দীর্ঘদিনের কর্মস্থলেই অবসর সময়টা কাটাতে চান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে আনন্দ পান তিনি।

তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জনক শিক্ষক আব্দুল মান্নান। ছেলে-মেয়েরা এখন সবাই প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষক আব্দুল মান্নান মাদরাসা প্রাঙ্গনের মসজিদেই রাত কাটান। সারাদিন থাকেন মাদরাসায়।

আব্দুল মান্নান জানান, বয়স হয়েছে, লাঠি ছাড়া চলতে পারি না। বাড়িতে যাবো, আবার মাদরাসায় আসবো এতে বেশ সমস্যা হয়। তাই সারাক্ষণ মাদরাসাতেই থাকি। সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলাম এই মাদরাসায়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে আলীম পাস করে পরবর্তীতে আমরা এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি।  বিনা বেতনে চাকরি জীবন শেষ করলাম। অবশেষে মাদরাসা শিক্ষকরা এখন বেতন পায়। এতেই আমি খুশি। আমার জীবন বিনা বেতনে শেষ হলেও এখনকার শিক্ষকরা তো পাচ্ছেন। নিজ হাতে তৈরি করা মাদরাসার মায়া ছাড়তে পারিনা।

তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে অবসর নিয়েছি। তবে মাদরাসার মায়া, শিক্ষার্থীদের মায়া আমাকে অবসর দেয়নি। বাড়িতে মন টেকে না। তাই মাদরাসায় এসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিই।

তিনি আরও বলেন, এখনো শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। তাদের পর্যাপ্ত বসার স্থান নাই। বৃষ্টি হলে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে। একটা ভবন হলে খুবই ভালো হয়। একদিন সেটাও হবে। তবে আমি দেখে যেতে পারবো কিনা জানি না। খুব ইচ্ছা করে আমার নিজ হাতে তৈরি করা মাদরাসায় একটা ভবন হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারবে।

চিথলিয়া মাদরাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মওলানা তমিজ উদ্দিন জানান, শিক্ষক আব্দুল মান্নান খুবই পরিশ্রমী। তিনি শিক্ষার্থীদের খুব সুন্দর করে পাঠদান করেন। বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিদিন মাদরাসায় আসেন। তিনি চাকরি জীবনে বিনা বেতনেই ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে অবসর নেন। কিন্তু চাকরির মতো করেই নিয়মিত এসে ক্লাস নেন। আমরা তাকে অবসর দিলেও তিনি অবসর মনে করেন না।

চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পিস্তল জানান, বিনা বেতনেই শিক্ষক আব্দুল মান্নান অবসর নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই তিনি সেখানে কর্মরত। আমি তার দীর্ঘায়ূ কামনা করি। তিনি এই এলাকায় শিক্ষা প্রসারে এক অনুকরণীয় ব্যক্তি।

মিরপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জুলফিকার হায়দার জানান, বিনা বেতনে চাকরি জীবন শেষ করেও শিক্ষক আব্দুল মান্নান এখনো মাদরাসায় ক্লাস নেন। তিনি মূলত ভালোবাসা ও মায়ার কারণে মাদরাসায় যান। বর্তমানে ওই মাদরাসাটি এমপিও ভুক্তির আওতায় এসেছে। অন্য শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.020198106765747