রাজশাহীর বাঘার পদ্মার চর। বিশাল চরজুড়ে রয়েছে নয়টি প্রাথমিক ও দু’টি উচ্চ বিদ্যালয়। এ ১১টি স্কুলে লেখাপড়া করে প্রায় ২ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা বেশির ভাগ সময়ই পদ্মার ভাঙন রক্ষায় স্থান পরিবর্তনের আতঙ্কে থাকেন। তবুও নদী ভাঙন পিছু ছাড়ে না।
স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মায় পানির সাথে সাথে বাড়ছে অতঙ্ক। কখনও ভাঙন, আবার কখনও সর্বস্ব হারানোর। এমন অতঙ্কেই দিন কাটছে রাজশাহীর পদ্মার চরে মানুষের। গেল বছর চরকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কালিদাসখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লক্ষ্মীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। সর্বশেষ গতমাসে পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় অন্য স্থানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া পদ্মার চরে মধ্যে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষ্মীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাসখালী, পূর্ব চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। চকরাজাপুর ও পলাশি ফতেপুর এই দুটি উচ্চ বিদ্যালয়। পদ্মার চরে ৯টি প্রাথমিক ও দুটি উচ্চ বিদ্যালয় মিলে প্রায় ২ হাজার ৬০০ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শারমিন ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিবছর শিক্ষকদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ থাকে নদী ভাঙন নিয়ে। আতঙ্ক কম থাকে না অভিভাবকদের মধ্যেও। স্কুল অন্যস্থানে নিয়ে গেলে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের যাতায়াতে কষ্ট হয়। এই চরের স্কুলগুলো ভাঙ্গা গড়ার মতোই।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, পদ্মা ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের ওয়ালে এসে পৌঁছে। এবারসহ তিনবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হলো।
অন্যদিকে, শনিবার বাঘায় পদ্মা ভাঙন পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার আলাইপুর থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদী ভাঙন এলাকা তিনি পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি চরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেখেন।
প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, নদী খনন করলে নাব্যতা ফিরে পাবে। নদীর মূল স্রোতধারা নদীর কেন্দ্র বরাবর প্রবাহিত হবে। এর সাথে পদ্মা তীর রক্ষার্থে স্থায়ী বাঁধ, স্পার, টি বাঁধ, আই বাধঁ নির্মাণ করা হবে। ফলে নদী ভাঙন অনেকাংশে কমে আসবে। অতি শিগগিরই এ কাজ শুরু করা হবে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,পদ্মায় বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরমধ্যে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। চকরাজাপুর ভাঙতে ভাঙতে আজ ছোট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পদ্মা তীর রক্ষার্থে কাজ করলে চকরাজাপুরবাসী নতুন স্বপ্নে উজ্জীবিত হবে।
জানা গেছে, চরকালিদাসখালী, জোতকাদিরপুর, দিয়ারকাদিরপুর, লক্ষ্মীনগরসহ ১৫টি চর ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে ১৫টি বাড়ি, আম বাগান, বড়ই বাগান, পেয়ারা বাগান, শাকসবজি, আখ ক্ষেত, বিভিন্ন ফসলি জমিসহ শত শত বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।