তাপ্রবাহের ভবিষ্যৎ খবর আমাদের জন্য ভালো নয়। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে এসে আমাদের সমন্বিতভাবে ভাবতে হবে। বাস্তবিক পক্ষে, সরাসরি শিক্ষাদানের চেয়ে উত্তম পদ্ধতি আর হয় না। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে দেখেছি, করোনার সময় অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো। করোনা আমাদের বন্দি জীবন বা জেলখানা শিখিয়েছে-আমরা আতঙ্ক ভরা মন নিয়ে চলেছি। ভেবেছি, মরে যাবো আবার মরিনি-কী লুকোচুরিময় জীবন পথ আমাদের! কী বিচিত্র! সে সময়ে আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো বাংলাদেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও আরেকটি আইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘কোডার্স ট্রাস্ট বাংলাদেশ’ এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত দুই দিনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার।
পরবর্তীকালে, আমার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘Gazi Training Home’ নিয়মিত কাজ চালাতে থাকি। শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানাই। উপস্থিতি কম হলেও ভালো লাগতো। সে সময় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেক শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছে শিশুশ্রমে, জীবন নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা মেয়েটা বাবা-মায়ের কথা শুনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেb। ইতিহাসের নির্মম সত্য হলো, আমাদের ষড়ঋতুর দেশ এখন ত্রি-ঋতুর দেশে রূপ নিচ্ছে। এর মধ্যে গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল এবং শীতকাল উল্লেখযোগ্য। এবারের গ্রীষ্মকাল আমাদের গৃহবন্দি করে দিচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২১ এপ্রিল খোলার কথা থাকলেও খুলছে ২৮ এপ্রিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়তে পারে ছুটি। কিন্তু ছুটি বাড়লে হিতে বিপরীত হবে এটা নিশ্চিত। কারণ, বর্তমান শিক্ষাক্রমের রুটিন অনুযায়ী বেশি ছুটির প্রয়োজন হলে বা বাড়লে এর প্রভাব হবে নেতিবাচক। এমনকি শিক্ষার ঘাটতি পূরণে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়, পরীক্ষা বা মূল্যায়নের চিন্তা তাদের নয়; তাদের চিন্তা মোবাইল ফোন, গেম, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টিকটক, পাবজি ইত্যাদি। শিখনকালীন মুল্যায়ন নিয়ে চিন্তা শিক্ষকদের। তাই আমাদের ভাবতে হবে শিখনকাল যেন ঠিক রাখা যায়। শিখনকাল ঠিক রাখা মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা।
এখন প্রশ্ন, তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা ঠিক হবে? বন্ধ রাখাও কী ঠিক হবে? খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের অন্তত পড়ানো যাবে। তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেবে। শিক্ষকেরা শিক্ষক সহায়িকার মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করবেন আর যদি এমন কিছু থাকে যা ক্লাসের বাইরের জন্য উপযুক্ত, সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারবেন শিক্ষক। ক্লাস বন্ধ রেখে তো শিখনকালীন মূল্যায়ন করা যাবে না। প্রথমেই বলেছি, সমন্বিত ভাবনার কথা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকাল ০৮.৩০ মিনিটে চালু করে ১২টার মধ্যে বন্ধ করলে কী খুব খারাপ হবে? বন্ধের মন্দের চেয়ে ভালো হবে খোলা রাখা। বিশেষ ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করবেন। কিংবা কোনো শিক্ষক ব্যক্তি ব্যবস্থাপনায় অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করতে পারেন। অফলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেনো নিরাপদ খাবার পানি পায়, খাবার স্যালাইন পান সে ব্যবস্থা করতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে। পোশাকের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে, যেনো যে পোশাক তাপ শোষণ কম করে সে পোশাক তারা পড়তে পারে। তাদের জুতা যেন হয় আরামদায়ক। শিক্ষক-শিক্ষার্থী- অভিভাবকদের সার্বিক সচেতনতাই পারে আমাদের শিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপযুক্ত পথ তৈরি করতে। বিদ্যুতের অবস্থা ভালো নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময়ে লোড শেডিং না করা হয়- তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত পরিবেশ পাবে।
পরিশেষে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে কীভাবে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়ায় আরো মনোযোগী করতে পারি সেটা এখন সময়ের দাবি। সময় যদি দাবি করে অনলাইনে ক্লাস, সেক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসকে না করা যাবে না। সমন্বিত ভাবনার মাধ্যমে সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই এগিয়ে যাওয়ার পথে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।
লেখক: কম্পিউটার শিক্ষক, চারিতালুক দারুল হুদা আলিম মাদরাসা, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ