মেডিক্যালে কোটায় ভর্তিতে অনিয়ম, ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর - দৈনিকশিক্ষা

মেডিক্যালে কোটায় ভর্তিতে অনিয়ম, ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটায় ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মেধা তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদেরও দেখানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। এর আগে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর না হয়েও এই তালিকায় সাত বাঙালি শিক্ষার্থীকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের অভিযোগ উঠলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। ফলে একই ধরনের ‘ভুল’ বারবার হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এর ফলে, কোটার প্রকৃত হকদারদের মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ সীমিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেনে সেবিকা দেবনাথ।   

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা মানতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। এর আগে হাইকোর্ট ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর মেধা কোটায় ৩৭টি মেডিক্যালে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে-৫ হাজার ৭২ জন। ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৬৯ জন আর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটায় ৩৯ জন।

জানা যায়, এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় যিনি প্রথম হয়েছেন তার মেধা স্কোর ছিল ২৯২ দশমিক ৫। আর মেধা তালিকার সবশেষ স্কোর ২৬৭ দশমিক ২৫। নিয়ম অনুযায়ী মেধা তালিকার পর শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটা। এ বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটা শুরু হয়েছে ২৬৬ দশমিক ৭৫ স্কোর দিয়ে। কিন্তু দেখা গেছে মেধা তালিকায় ২৬৯ স্থান ও মেধা স্কোর ২৮১ দশমিক ৭৫ থাকার পরও ওই শিক্ষার্থীকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি দেখানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, মেডিক্যালে ভর্তি আবেদনের ফরম পূরণের সময় অনেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ করেন। অনেকে ভুলবশত আদিবাসী কোটার অপশন পূরণ করে ফেলেন। এর ফলে ফলাফল প্রস্তুতের সময় শিক্ষার্থীরা যেভাবে ফরম পূরণ করে সেভাবেই ফলও তৈরি করা হয়। কোন শিক্ষার্থী কীভাবে ফরম পূরণ করেছে সেটি দেখার সুযোগ থাকে না।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধার কোটা মানে তাকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া। যদি কোনো শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় সুযোগ পায় তাহলে সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় থাকবে না।

সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর ৮ ধারা অনুযায়ী স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে এ বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছেন সৈয়দা উম্মে সায়মুনা নাদিয়া। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ সারোয়ার আলম। রামপুরা বনশ্রীর ডি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসিন্দা নাদিয়া জানতে চান, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির পরীক্ষার চূড়ান্ত নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে? এর উত্তরে অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে- চূড়ান্ত নির্বাচনের ক্ষেত্রে  [inside-ad1]মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সন্তানদের সন্তানাদির জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত জানতে চাওয়া হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের, মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যার সন্তানদের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে কিনা? এর উত্তরে বলা হয়েছে বিধি মোতাবেক দেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত জানতে চাওয়া হয়, যেসব মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং পুত্র কন্যা মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের নাম কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা? এর উত্তরে বলা হয়- সাধারণ মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও সন্তানদের সন্তানাদির নাম কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

কিন্তু দেখা গেছে মেধাতালিকায় থাকার পরও একাধিক শিক্ষার্থীকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দেখানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২৬৯ জনকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নেয়া হয়েছে; যার মধ্যে ২৬২ জনই মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী। যেমন- রিফা তাসনিয়া মেধা তালিকায় ২৫৬ (মেধাস্কোর ২৮১ দশমিক ৭৫), সালেহ মোহাম্মাদ শাহানশাহ মেধা তালিকায় ২৬৯ (স্কোর ২৮১ দশমিক ৫), কামরুন নাহার কানন মেধা তালিকায় ২৯৫ (মেধা স্কোর ২৮১ দশমিক ২৫), জাহ্নবি জয়ীতা মেধা তালিকায় ৩০৭ (মেধা স্কোর ২৮১), জাবিন তাসমিম টেসি মেধা তালিকায় ৩১০ ( মেধা স্কোর ২৮১), মো. আবু হাসান মেধা তালিকায় ৩৫১ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ৫), ফারজানা হায়দার মিমিয়া ৩৫৭ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ৫), আশনা কায়সার প্রমি মেধা তালিকায় ৩৬৪ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ২৫), আনিকা তাহসিন নিশা মেধা তালিকায় ৩৭৩ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ২৫) সোমিয়া আক্তার মেধা তালিকায় ৩৮৫ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ২৫), সাদিয়া নূর মেধা তালিকায় ৩৭০ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ২৫), মোসাম্মৎ ফারহানা ইসলাম মেধা তালিকায় ৩৭১ (মেধা স্কোর ২৮০ দশমিক ২৫), নাহিয়া বিনতে ওয়ালি মেধা তালিকায় ৪০৩ (মেধা স্কোর ২৮০), সাবিকুন নাহার অর্পিতা মেধা তালিকায় ১২৪৬ (মেধা স্কোর ২৭৫ দশমিক ২৫), আমরিন হাসিব সাফা মেধা তালিকায় ১২৬৯ (মেধা স্কোর ২৭১৫ দশমিক ২৫), কানিতা হাসান তিফা মেধা তালিকায় ১২৯৬ (মেধা স্কোর ২৭৫ দশমিক ২৫) দীপা পাল প্রত্যাশা মেধা তালিকায় ২৪৪৩ ( মেধা স্কোর ২৭২) মোসাম্মৎ এলিনা ইমরোজ মেধা তালিকায় ২৫৮২ (মেধা স্কোর ২৭১ দশমিক ৫), মো. মুরাদ হোসাইন মেধা তালিকায় ৩০৩০ (মোধা স্কোর ২৭০ দশমিক ৭৫), মো. শেখ আব্দুল্লাহ মোধা তালিকায় ৩০৭২ (মেধা স্কোর ২৭০ দশমিক ৫) এদের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে আজ কথা বলব। তদন্ত করে দেখব। যদি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে এবারই তিনটি পার্বত্য জেলাসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটায় নির্বাচিত ১৭ জনের মধ্যে ৭ জন বাঙালি শিক্ষার্থী ছিল। এ কোটায় নির্বাচিত হওয়া বাঙালি শিক্ষার্থীরা হলেন- সাদিয়া আক্তার রাইসা (কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ, মানিকগঞ্জ), সায়মা আলম (সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ), তহুরা তানজিনা নিশাত (শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ, কিশোরগঞ্জ), তাসনুবা অস্মিতা কাহন (শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, গোপালগঞ্জ), আরফা জান্নাত সামিয়া (শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইল), শাহরিয়ার হাসান শিফান (যশোর মেডিক্যাল কলেজ) এবং বৈশাখী দে নদী (শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, জামালপুর)। বিষয়টি প্রাকশিত হওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ সমস্যা সমাধান হয়।

প্রসঙ্গত; এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ১৮ ফেব্রুয়ারি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি - dainik shiksha আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058679580688477