রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ১৫৩ শিক্ষককে এমপিওভুক্তির চেষ্টা - দৈনিকশিক্ষা

রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ১৫৩ শিক্ষককে এমপিওভুক্তির চেষ্টা

মুরাদ মজুমদার |

আপিল বিভাগের রায় বলেনি এমপিওভূক্ত করতে। তবুও ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে দেয়া একটা রায়ের পর্যবেক্ষণের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ১৫৩ জন প্রভাষককে এমপিওভুক্তির চেষ্টায় মরিয়া একটি এমপিও সিন্ডিকেট। এই ১৫৩ জনের সবাই ডিগ্রি কলেজের তৃতীয় শিক্ষক। তারা ২০০১ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কলেজে নিয়োগ  পেয়ে শিক্ষকতা করে আসছেন। একইসঙ্গে এমপিওভুক্তির জন্য রিট মামলা চালিয়ে আসছেন। এখন এমপিও পাওয়ার জন্য এমপিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এই প্রভাষকদের অনেকেরই। যোগদানের তারিখ থেকে ১৫৩ জনের সবাইকে এমপিওভুক্ত করালে সরকারের গচ্চা যাবে প্রায় বিশ কোটি টাকা। আর বকেয়াসহ এমপিওভুক্তি করিয়ে দিতে পারলে সিন্ডিকেটের পকেটে যাবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। যদি এমপিওভুক্ত হয় তাহলে একেকজন প্রভাষক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বকেয়া পাবেন। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এমনই সিন্ডিকেট, এমপিওর চুক্তি ও আইনি অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এমপিওভুক্তির চেষ্টার সন্ধান মিলেছে।

জানা যায়, এই সিন্ডিকেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন নারী উপ-সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আইন শাখার মো: আবুল কাসেম ও আল আমিন সরকার এবং অন্য শাখার অফিস সহকারি সৈয়দ লিয়াকত আলী জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও আলমগীর নামের মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মচারী নেতা সার্বিক কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এমপিওভুক্তির চেষ্টার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে নজিরবিহীনভাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কলেজ শাখার পরিচালককে অন্ধকারে রেখে আপিল বিভাগের রায়ের মনগডা ব্যাখা দিয়ে আইন শাখার মতামত সম্বলিত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল পাঠানো চিঠিতে অধিদপ্তরের আইন কর্মকর্তার মতামতে এরকম: “যদিও ১৫৩ জন পিটিশনার (শিক্ষক) প্যাটার্ণ বহির্ভূত, তথাপি আপিল বিভাগের রায় ও অবজারভেশন অনুসারে ১৫৩ জন পিটিশনারকে এমপিওভুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে”।

এ চিঠির সূত্র ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখা-১ থেকে গত ১৪ই মে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো অপর একটি চিঠিতে বলা হয়, “আদালতের রায় বাস্তবায়নের নিমিত্ত বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে নিয়োগকৃত ১৫৩ জন তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তির বিষয়টি বিবেচনার জন্য ইতিপূবে এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজের ১০২ জন তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তির বিস্তারিত তথ্য জানা প্রয়োজন”।

অধিদপ্তরের সুষ্পষ্ট মতামতও চাওয়া হয়েছে। চিঠি পাঠানোর পর প্রায় একমাস পার হলেও অধিদপ্তর থেকে কোনো তথ্য না পাঠানোয় সোমবার (১২ জুন) কড়া ভাষায় তথ্য চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে টেলিফোন করেছেন একজন উপ-সচিব। তার টেলিফোন পেয়ে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কী করবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না।

তবে, তৎপর দেখা গেছে ১৫ বছর যাবত অধিদপ্তরের আইন শাখায় কর্মরত বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক মো: আবুল কাসেম ও শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত অপর শিক্ষক ও আইনে তৃতীয় বিভাগে পাস মো: আল আমিন সরকারকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক শিক্ষার প্রশ্ন এড়িয়ে এই দুই কর্মকর্তা দাবি করেন তারা কিছুই জানেন না।

তবে, আল আমিন সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের মত এরকম: ‘এহেন খারাপ ছেলেটিকে একজন সাবেক মহাপরিচালকের সুপারিশে আইন শাখায় পদায়ন করে ভুল করেছিলাম।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপ-পরিচালক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, “খুব চাপের মধ্যে রয়েছি। নানাজন তদবিরে আসে। লিয়াকত তালিকা নিয়ে ঘোরাঘুরি করে। মন্ত্রণালয় থেকে কর্মচারির সমিতির এক নেতার ফোন আসে।”

এক প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, “এই ১৫৩ জন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। জেনে বলতে হবে।”

এমপিও সিন্ডিকেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন প্রভাষক বলেছেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে কর্মরত তাদের পূর্ব পরিচিত কয়েকজন আবেদন করতে বলেছেন। তারা একটু তদবিরের আশ্বাস দিয়েছেন মাত্র।

এমপিওভুক্তি করানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এমন কয়েকজনের নাম: আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের  মো. মোস্তাক আহম্মদ, মো. জিয়ারূল হক, মো. শাহাজাহান আলী, মো. জুলফিকার আলী, শফী মাহমুদ, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. সারোয়ার হোসেন, মো. মুনজুর রহমান এবং মো. শাহিনুর ইসলাম।

সরদহ কলেজের মো. আকরাম আলী, মো. আব্দুল জলিল, শিবির ভঞ্জন মালাকার, মো. গোলাম মাওলা, মোসা. শায়লা সুলতানা ও মো. আজমল হক।

 নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজের মো. শামসুজ্জোহা, মো. নাজমুল হক, মো. আব্দুর রশিদ, সঞ্জয় কুমার সেন, মো. কামাল হোসেন, আবুল বাশার মো. সাইদুর রহমান, মো. মাসুদ রেজা, মো. কসিম উদ্দিন। দেবী চৌধুরাণী ডিগ্রি কলেজের মো. মাহাতাব মিয়া, মো. মোফাচেছর হোসেন, এ.আর.এম মোজাফ্ফর হোসেন ও মো. মোখলেছুর রহমান।

আদর্শ ডিগ্রি কলেজের মো. আবু তালেব, নাসরিন আক্তার বানু, মোসাঃ নাহিদ দেলওয়ারা পারভিন, সুলতানা পারভিন, মোসাঃ মৌসুমি কবির ও মোঃ মাহফুজুর রহমান।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের মোঃ হায়দার আলী এবং মোঃ রফিকুল ইসলাম।

শোভাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সরকার, মোঃ সহিদুল ইসলাম মন্ডল ও মোঃ রেজাউল ইসলাম খান।

সাটুরিয়া সৈয়দকালুসাহ ডিগ্রি কলেজের মোঃ ফিরোজুল ইসলাম, আলী আহম্মদ, বাবু লাল বসাক। শাহজাদপুর ডিগ্রি কলেজের মোঃ আলমাছ আনছারী। হাজী জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের মোঃ হুমায়ুন কবির।

বিল হালতি ত্রেমোহনী ডিগ্রি কলেজের নূর-এ-আলম এবং মোঃ হারুনুর রশীদ।

আরও পড়ুন

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047521591186523