পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে ৬ বছরের বেশি সময় আগে সরকারের নেওয়া একটি উদ্যোগ পরিপত্রেই বন্দি হয়ে রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুকুরে শিক্ষার্থীদের সাঁতারের ব্যবস্থা করার নিদের্শসংবলিত ওই পরিপত্রের কথা এখন জানেনই না সংশ্নিষ্ট অনেক কর্মকর্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচানো যেত।
পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে দেশের সব উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সমমানের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাঁতার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন বাধ্যতামূলক করে একটি খসড়া পরিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ২০১৫ সালের মার্চে। সংশ্নিষ্টদের মতামত নেওয়ার পর ওই বছরের এপ্রিলে চূড়ান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। এরপর আর এ নির্দেশনার অগ্রগতি নেই। জানা যায়, বর্তমানে সংশ্নিষ্ট অনেক কর্মকর্তার গোচরেই আসেনি সেই পরিপত্র। কিন্তু বাংলাদেশে পানিতে ডুবে প্রতি বছর বহু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে আজ ২৫ জুলাই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হতে যাচ্ছে 'পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ' দিবস। প্রতি বছরের ২৫ জুলাই দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশের প্রস্তাবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার অন্যতম প্রধান পথই হচ্ছে সাঁতার শেখানো। পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার এতই বেশি যে জাতিসংঘ একে 'নীরব মহামারি' বলেই আখ্যা দিয়েছে। অথচ সরকারের এমন একটি পদক্ষেপ পরিপত্রেই থমকে আছে।
সাঁতার না জানার কারণে বাংলাদেশে মাসে গড়ে ৮২ জন প্রাণ হারাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ সংগঠন সমষ্টি। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১৯ মাসে ৯৬৭টি ঘটনায় সারাদেশে ১ হাজার ৫৬২ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ১০ বছরের কম। ইউনিসেফের ২০১৬ সালে একটি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে দৈনিক ৪৮ জন এবং বছরে ১৮ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের বিষয়ে রাজধানীসহ দেশের বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের স্কুলে সাঁতার শেখানোর কোনো কার্যক্রম নেই। অভিভাবকরাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, বিষয়টির অগ্রগতি কিংবা বাস্তবায়নের বিষয়টি তার জানা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) মাহবুব হোসেন বলেন, এটি কেন কার্যকর হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখবেন।
রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দুই-একজনের ওই পরিপত্রের কথা জানা থাকলেও অভিভাবক বেশিরভাগই এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা পরিপত্রের কথা জানলেও পুকুর বা জলাশয় না থাকার কারণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানোর কোনো উদ্যোগ নেননি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও নেই কোনো নজরদারি। ফলে সাঁতার না জানায় প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও স্কুলশিশুর মৃত্যু হচ্ছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোলাইমান বলেন, স্কুলে পুকুর না থাকায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অন্য কোথাও নিয়ে সাঁতার শেখানোও ঝুঁকিপূর্ণ।
ঢাকায় পর্যাপ্ত পুকুর না থাকলেও গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে এ সংকট নেই। তা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের সাঁতার শেখানোর নির্দেশনা সম্পর্কে সংশ্নিষ্টরা অবগত নন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা খাসেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোকেয়া খাতুন জানান, স্কুল থেকে সাঁতার শেখানোর বিষয়ে সে বা তার বন্ধুরা কিছু জানে না।
ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্কুলে যোগাযোগ করে অভিভাবক বা শিক্ষার্থীদের কাছে সাঁতার শেখানো সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাঁতার শেখানোর জন্য নেই পুকুর ও সরঞ্জাম।