বলতে দ্বিধা নেই-অনেকটা উল্কার বেগে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় স্বদেশ। তবে, শুধু শিক্ষায় যেন সে এগিয়ে যাওয়া কেবলি থেমে থেমে। ভাগ্যিস, একজন শেখ হাসিনা বেঁচে গিয়েছিলেন বলে আমরা আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। তাকে ঘিরে আজ সকলের নানা আশা ও প্রত্যাশা। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে এত আশা ও প্রত্যাশা কেন সবার? শিক্ষা পরিবারে কেনই বা এত উচ্ছাস? জাতীয়করণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠরা আজ এত আত্ম প্রত্যয়ী কেন?
বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এ জাতিকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন প্রিয় স্বাধীনতাটি এনে দিয়েছিলেন। জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যুদ্ধ-বিধ্বস্থ এক ভঙ্গুর অর্থনীতির উপর
দাঁড়িয়ে ৩৭০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের সূত্রপাত করেছিলেন। বাবার পদাংক অনুসরণ করে এক চরম প্রতিকূল পরিবেশে বিগত শতাব্দীর নব্বই’র দশকে এ দেশের রাজনীতিতে নক্ষত্রের মত আভির্ভূত হন জননেত্রি শেখ হাসিনা। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর ক্ষমতায় এসে ‘ইনডেমনিটি’ নামের কালো অধ্যাদেশটি বাতিল করে অশুভ শক্তির মাথা ধরিয়ে দেন তিনি। এরপর একে একে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জেল হত্যার বিচার এবং সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। এটা কেউ কোনদিন ভাবেইনি। এমনটা হবে- তা কেউ কোনদিন চিন্তা ও করেনি । ইতোমধ্যে এক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ তার বদৌলতে এ জাতি পেয়ে গেছে। বাবার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আজ কন্যার হাতে বাস্তবের সোনার বাংলা। এই তো মাত্র ক’বছর আগে ২৬০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে শিক্ষার অগ্রযাত্রা আরেক ধাপ এগিয়ে নেন তিনি। কয়েকশ’ বেসরকারি স্কুল ও কলেজ আজ জাতীয়করণের প্রক্রিয়ায়। সে আরেক বিশাল অগ্রগতি। পদ্মা সেতু আজ এক দৃশ্যমান বাস্তবতা। এ সব কারণে জননেত্রি শেখ হাসিনা এখন সবার আশা-ভরসা ও প্রত্যাশার মূল কেন্দ্র বিন্দু।
কিন্তু, তারপর ও আমাদের শিক্ষায় এখনো অনেক ক্ষত বিদ্যমান। দেশে বহু স্কুল-কলেজ আজো এমপিও পায়নি। অনেক শিক্ষক-কর্মচারী বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকুরী করেন। একটা সময় বেসরকারি স্কুল-কলেজে কমিটি নিয়োগ দিতে পারতো। এখন আর তা নেই। আইসিটি, উৎপাদন ও বিপনন, ফিন্যান্স-ব্যাংকিং ইত্যাদি আবশ্যিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের এমপিও নেই। ১৩.১১.১৩ তারিখের এক কালো পরিপত্র কাল হয়েছে তাদের। মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার শিক্ষার্থীগণ উপ বৃত্তি পায় না। সে কেমন বৈষম্য? দিন দিন আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে ও নতুন শাখা খোলার অনুমতি নেই। অনুমোদিত অনেক শাখায় বিধিমত নিয়োগ প্রাপ্তদের বহু দিন থেকে বেতনের খোঁজ-খবর নেই।
ম্যানেজিং কমিটি ও গভার্ণিং বডি – সে আরেক বাড়তি উৎপাত। সদস্য কিংবা সভাপতি হতে কোন যোগ্যতা লাগে না। আজব কারবার! যারা বিএ কিংবা এমএ পাস লোকদের এবং শিক্ষার দেখভাল করে, তাদের কোন শিক্ষা লাগে না। দুনিয়ার আর কোথাও এ রকম হয় কীনা- জানিনে।
জাতীয়করণ নিয়ে সারা দেশে কতই না হৈচৈ পড়েছে! কত তেলেসমাতি হচ্ছে এ নিয়ে! এ সুযোগে কতজনে টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছে। আমাদের শিক্ষার দৈন্য দশা আর কত দেখতে হবে ? বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সরকার বছরের প্রথম দিনেই ছাত্র ছাত্রীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে কতই না সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ের নানা ভুল ভ্রান্তি ও অসঙ্গতি আমাদের সকল সুনাম মাটি করে দিচ্ছে। এনসিটিবি’তে যারা কাজ করেন, তাদের এত দায়সারা হলে চলে কী করে?
আমাদের শিক্ষায় কারিগরি ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কারিকুলামের উপর জোর দিতে হবে। গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি বদলাতে হবে। কেননা, শিক্ষাই একমাত্র হাতিয়ার- যা সহজে সবকিছু বদলে দিতে পারে। তাই, সকল স্কুল-কলেজ একত্রে জাতীয়করণ করে শিক্ষায় আরেক অনন্য বিপ্লবের দ্বার উন্মোচনের জন্য জননেত্রি শেখ হাসিনার দিকে সকলে চেয়ে আছেন।
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ , কানাইঘাট , সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।