অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থীরা পাসের দাবিতে স্মারকলিপি দিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের ভেতরে গেছেন ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
রোববার (১৫ জুন) বেলা ১১টার দিকে প্রবেশ করেন তারা। এদিন সকালে তারা এনটিআরসিএর সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
আরো পড়ুন: শিক্ষক নিবন্ধনে ফেল করা প্রার্থীদের এনটিআরসিএর সামনে অবস্থান
অকৃতকার্য প্রার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা সনদ না নিয়ে মাঠ ছাড়বো না। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ফ্যাসিস্টের দোসর। তাই তিনি আমাদের ফেল করিয়েছেন।
তারা আরও বলেন, চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল গত ৪ জুন প্রকাশ করা হয়। এতে ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থী ফেল করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন ফেল করা প্রার্থীরা। বোর্ডভেদে বৈষম্য করা হয়েছে। যেসব বোর্ডে অস্বাভাবিকভাবে কম পাসের হার হয়েছে, তা পূনর্মূল্যায়ন বা তদন্তের আওতায় আনা হোক। একই সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান মফিজুর রহমানকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন ফেল করা প্রার্থীরা।
ফেল করা প্রার্থীরা বলেন, এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান ভাইভা প্রার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করেছেন। যেমন, উনি ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেওয়ার কারণে তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি রেজাল্টের আগেই ডিএমপি কমিশনারের কাছে পুলিশ সাপোর্ট চেয়েছে।
৪ জুন রেজাল্টের পরে সব অফিস আদালত বন্ধ করার কারণে উনি ওই দিন রেজাল্ট দিয়েছেন। যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা হাঙ্গামা না করতে পারে। তিনি সরকারি ছুটির পরে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন যাতে চাকরি প্রার্থীরা তার সঙ্গে কথা বলতে না পারে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে কীভাবে এ আত্মঘাতী সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারেন। আমরা এই এনটিআরসি চেয়ারম্যানের পদত্যগ দাবি করছি।
ফেল করা প্রার্থীরা আরো বলেন, আমরা যারা ভাইভা পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেছিলাম তাদের সবাইকে সনদ দিতে হবে। যদি না দেয় তাহলে ১৫ জুন থেকে আমরণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে। আমরা সনদ না নিয়ে মাঠ ছাড়বো না। ভাইভা বোর্ডে এমনও বোর্ড আছে যেখানে ২৯ জনকে ফেল করানো হয়েছে, একজনকে পাস করানো হয়েছে। ৩০ জনের মধ্যে আবার অনেক বোর্ড আছে যেখানে ২৭ জনকে ফেল করানো হয়েছে, তিনজনকে পাস করানো হয়েছে। অনেক বোর্ড আছে ২৫ জনকে ফেল করানো হয়েছে ৫ জনকে পাস করানো হয়েছে। তাহলে একধারে এত ফেল করানোর মানে কি?
উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ব্যবস্থাপনায় গত বছরের ১২ ও ১৩ জুলাই অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে ৮১ হাজর ২০৯ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন।
মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে ৬০ হাজার ৫২১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন উত্তীর্ণ হন। গড় পাসের হার ছিলো ২৪ শতাংশ। পরে তারা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন।
অষ্টাদশ নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা গত ১২ ও ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জুলাই দেশের আট জেলায় সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৩ জুলাই কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এনটিআরসিএ ১৮তম নিবন্ধনের প্রিলিমিনারিতে ৮ লাখ ৬০ হাজারের বেশি প্রার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ নভেম্বর অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে প্রায় ১৯ লাখ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। গত ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারিতে ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। গত বছরের ১৫ মে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তীর্ণ হয় ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন প্রার্থী। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা স্কুল-২ পর্যায়ে ২৯ হাজার ৫১৬ জন, স্কুল পর্যায়ে ২ লাখ ২১ হাজার ৬৫২ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ২ লাখ ২৮ হাজার ৮১৩ জনসহ সর্বমোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সার্বিক পাসের গড় হার ছিলো ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।
উল্লেখ্য, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করা প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান আর শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীরাই মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রা শুরুর সময় শুধু প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী সনদ দেয়া হতো। সেটা দেখিয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করা যেতো। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কমিটির নেয়া পরীক্ষাই ছিলো চূড়ান্ত। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত দায়িত্ব পায় এনটিআরসিএ।