বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশ উন্নত হতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। এখানে সেটিই হুবহু তুলে ধরা হলো—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০টির বেশি রিসার্চ সেন্টার আছে। এর মধ্যে একটি রিসার্চ সেন্টার আছে যার নাম Semiconductor Technology Research Centre! হতে পারতো এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না শুধু দেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সেন্টার। যদিও এর বয়স ৩০-৩৫ কিংবা তারও বেশি হবে তথাপি এটি এখনো এক বা দুই রুম বিশিষ্ট একটি সেন্টার। এর ইমপ্যাক্ট কি? এত বছরে এর গবেষণা আউটপুট কি? এত বছরেও এর কোন নিজস্ব ফ্যাকাল্টি, পোস্ট-ডক ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬টি রিসার্চ সেন্টারের মধ্যে এটিও নামকাওয়াস্তে জাস্ট একটা রিসার্চ সেন্টার। কোন ইম্প্যাক্টফুল রিসার্চ বলতে নাই। অথচ বর্তমান বিশ্বে এই সেমিকন্ডাক্টর রিসার্চ-এ যারা যত বেশি উন্নত সে তত উন্নত। তাইওয়ান এত উন্নত হয়েছে এর পেছনে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি। আধুনিক প্রযুক্তির মেরুদণ্ড হিসেবে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প আজকের বিশ্বে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে।
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, গাড়ি, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও সেমিকন্ডাক্টরের উপস্থিতি অপ্রতিরোধ্য। সেমিকন্ডাক্টর হলো এমন এক ধরনের পদার্থ, যা নির্দিষ্ট শর্তে বিদ্যুৎ পরিবাহিত করে, এবং এগুলিই মাইক্রোচিপ ও ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের মূল উপাদান — আধুনিক ডিজিটাল বিপ্লবের ভিত্তি। সেমিকন্ডাক্টর শিল্প শুধুমাত্র প্রযুক্তির ভবিষ্যত নয়, বরং একটি জাতির প্রগতির প্রতীকও। যে দেশ এই শিল্পে নেতৃত্ব দেবে, তারই হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। ভিয়েতনাম এই খাতে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা ব্যয় করছি ঝগড়াঝাটিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রুম বিশিষ্ট এই সেন্টারটিরও কোন পোস্ট-ডক ফেলো নাই, নিজস্ব পিএইচডি ফেলো নাই। বাজেট নাই, কোন দিক নির্দেশনা নাই।আরো পড়ুন: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলছে না
এরপর আছে "Bose Centre for Advanced Study and Research in Natural Sciences"! কার নামে এটি? যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিক্সের জন্মস্থান হওয়ার গৌরব এনে দিয়েছেন, যার নামে একটি কোয়ান্টাম পার্টিকেল আছে, যার সাথে আইনস্টাইনের জড়িয়ে একটা তত্ত্ব আছে সেই সত্যেন বোসের নামে। এত বড় একজন বিজ্ঞানীর নামে সবচেয়ে অবহেলিত এক রুম বিশিষ্ট একটি গবেষণা সেন্টার বানিয়ে আমরা আসলে সত্যেন বোসকে অসম্মান করছি না আমরা যে কত বড় অথর্ব এবং অযোগ্য বিশ্বের কাছে আমরা সেটা প্রমান করছি? এরই মধ্যে বোস সেন্টারের বয়স ৫১ বছর। এইটার আউটপুট কি? তার আগে জানি এর আছে কি? বিজ্ঞান কারখানায় ১ রুমের একটা অফিস আর সেখানে আছে দুইজন কর্মকর্তা/কর্মচারী আর এর পরিচালক। কিছু ছাত্রকে ফেলোশিপ দিয়ে মাসে মাসে তাদের টাকার চেক দেওয়া। পরিচালককে প্রতিদিন এক গাদা স্বাক্ষর করা।
এখানে না আছে ইন হাউস পোস্ট-ডক ফেলো, পিএইচডি ফেলো, না আছে নিজস্ব গবেষক। যাদেরকে ফেলোশিপ দেওয়া হয় তারা নিজ নিজ বিভাগে থেকেই গবেষণা করে। এখানে টাকা দেওয়া ছাড়া বোস সেন্টারের আর কোন কাজ নেই। অথচ এই কাজ রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তারাই করতে পারতেন। এর জন্য "Bose Centre for Advanced Study and Research in Natural Sciences" নামক এত বড় একটা নাম দিয়ে সেন্টার করার কোন মানে আছে?এরপর আছে ইনস্টিটিউট অফ এনার্জি রিসার্চ যাকে এনার্জি পার্কও বলে। এর বয়স কমপক্ষে ৪০ বছর হবে। এই ৪০ বছরে এর গবেষণা ইমপ্যাক্ট যদি দেখেন আমি নিশ্চিত প্রায় শূন্য। কিছু পিএইচডি এবং গবেষণা পত্র হয়েছে যা গার্বেজ জার্নালে হয়ত প্রকাশিতও হয়েছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত কোন ইম্পাক্টফুল কাজ গত ৪০ বছরে হয়নি। সোলার এনার্জির উপরে এর কাজ দিয়েই এই সেন্টারের যাত্রা শুরু কিন্তু সোলার এনার্জির উপর গবেষণায় তেমন কোন ইমপ্যাক্টফুল কাজ আজ পর্যন্ত হয়নি। হবে কিভাবে? এর কি নিজস্ব পোস্ট-ডক আছে? পিএইচডি ছাত্র আছে? নিজস্ব ফ্যাকাল্টি আছে? কোন একটি বিভাগ থেকে ১ জনকে এনে পরিচালক বানালেই কি গবেষনা হতে থাকবে?
আর সেন্টারগুলোর নাম না হয় নাই বললাম। সবগুলোই নামকাওয়াস্তে। এতগুলো সেন্টার রাখার কি যুক্তি আছে? গত ১০ বছরে এই সেন্টারগুলোর কোনটি কি রিসার্চ করেছে তার একটা ডাটা নিয়ে ৫৬টি রিসার্চ সেন্টার থেকে ৬টি রিসার্চ সেন্টার রাখা যেতে পারে। আমরা সংখ্যার পেছনে আর কত দৌড়াবো? মানের পেছনে কেন দৌড়াই না? এতগুলো সেন্টার রাখা হয়েছে এতগুলো পরিচালক বানানোর জন্য। আমাদের দেশের মানুষেরা পদ পেতে খুব ভালোবাসে। তাই সবাই পদের পেছনে দৌড়ায়। পদ পেয়ে দুর্গন্ধ ছড়ানো ছাড়া এই পদের আর কোন কাজ আছে বলে আমি মনে করিনা। ভেবেছিলাম ৫ই আগস্টের পর পরিবর্তন আসবে। আসেনি। আর আসবে বলেও মনে হয় না।
আজ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ভিসি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ন্যূনতম ৫০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। সেই টাকা দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের বেতন ও বিশেষ সুবিধা দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাদের অধীনে পোস্ট-ডক ও পিএইচডি ফেলো দিয়ে বিশ্বমানের গবেষণার পরিবেশ তৈরী করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও উন্নত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতো। ক্যাম্পাসের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যয় করতে পারতো। উন্নত বেতন দিয়ে রেজিষ্ট্রেরভবনের জন্য দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে ছাত্রছাত্রীবান্ধব প্রশাসন তৈরীতে ব্যয় করতে পারতো। শিক্ষকদের ভালো বেতন দিয়ে সকল প্রকার পার্ট টাইম নিষিদ্ধ করে শিক্ষকদের কেবল নিজ ক্যাম্পাসে থেকে আপন ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ও গবেষণায় মনোনিবেশ করাতে সময় দিতে পারতো। মনে রাখতে হবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশ উন্নত হতে পারেনি। এইটাই যদি জানি তবে এইটা করি না কেন?