দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএতে গত ‘কতিপয়তন্ত্র’ চলে আসার অভিযোগ পুরনো। প্রশাসন ও শিক্ষা ক্যাডারের ‘কতিপয়’ কর্মকর্তাই এর হর্তাকর্তা ও পাস-ফেলের নিয়ন্ত্রক। কে মেধাবী, কে ভালো পরীক্ষা দিলেন, সেটা বিবেচ্য নয়। কতিপয় কর্মকর্তা চাইলেই পাস না চাইলে ফেল। এমন অভিযোগ সবার মুখে মুখে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ কতিপয় কর্মকর্তার অপসারণসহ শাস্তি দাবি করছেন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও অনুত্তীর্ণরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে েএনটিআরসিএর দুর্নীতিবাজ কর্তাদের অনিয়মের তথ্য-প্রমাণের ডালি খুলে দিয়েছেন তারা। তবে, তাদের অভিযোগ সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে নয়।
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়েছে ৪ জুন। এতে ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থী ফেল করেছেন।
অভিযোগকারীদের ভাষ্য, অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ ( এনটিআরসিএ) আয়োজিত ভাইভায় এক্সটার্নালরা ১৪শ এবং ২৪তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। আর এক্সটার্নালরা সুযোগ পেয়েছেন, এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান এবং ১৭ বছর ধরে কর্মরত দীনা পারভীন ও ফিরোজ আহমেদ-এর পছন্দে। এবারে ৩০শতাংশ ফেলের অধিকাংশের দায় এক্সটার্নালদের।
জানা যায়, এনটিআরসিএতে ১৭ বছর ধরে উপ-পরিচালক পদে দীনা পারভীন ও ৮ বছর ধরে সহকারী পরিচালক ফিরোজ আহমেদ কর্মরত রয়েছেন । দীনা পারভীন কারাবন্দী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান-এর ভাগ্নি। দীনা ও ফিরোজ যথাক্রমে ১৪শ এবং ২৪তম ব্যাচের। এক্সটার্নাল হিসেবে এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন এর মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে থাকার সুুযোগ তৈরি করে দেন দীনা ও ফিরোজ। এমন অভিযোগ সবার মুখে মুখে।
আরো পড়ুন
এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইভায় অংশ নেয়া এক্সটার্নালদের পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণের। যেহেতু এক্সটার্নালদের কোনও দায়বদ্ধতা ছিল না, তারা শুধু অনারিয়ামের আশায় এসেছিলেন, সেহেতু তারা গাছাড়া ভাবে শেষ করেন।
নাম প্রকাশে অনেক অনিচ্ছুক মাউশি অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, এনটিআরসিএর এক্সটার্নাল হিসেবে ভাইভা বোর্ডে থাকার জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন। তবে মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজ নিয়ে ওই কর্মকর্তা জানতে পারেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের বিতর্কিত ভাগনী দীনা পারভীন, যিনি দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এনটিআরসিএতে আছেন তিনিই মূলত এই ভাইভায় যারা অংশ নেবেন সে বিষয়গুলো দেখেন। তিনি বলেন, মাউশি অধিদপ্তরের একজন পরিচালক যিনি কারাবন্দী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির খুব ঘনিষ্ঠ তাকেও ভাইভা বোর্ডে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রীর সরাসরি স্বাক্ষরে তিনি এনটিআরসিএতে আসেন। দু-দুবার বদলির অর্ডার হওয়ার পরেও শাহজাহান খানের প্রভাবে তিনি এনটিআরসিএতে থেকে যান। মূলত তার বদলি আটকে এনটিআরসিএতে থাকার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে তার পছন্দের এক্সটার্নাল ডাকতেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এছাড়াও অষ্টাদশের চারু ও কারুকলা বিষয়ে ফলাফল অসংগতির পর জানা যায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন মডারেশন, খাতা দেখা তা একটি কমিটির মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়েছে। এই কমিটির দায়িত্বে ছিলেন সেই বিতর্কিত দীনা পারভীন।
অভিযোগের বিষয়ে ফিরোজ এবং দীনা পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান শ্রান্তি বিনোদন ছুটিতে রয়েছেন। তাই তিনি কোনো অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন।