পৃষ্ঠা-দাম বাড়িয়ে বই বিক্রি, অভিযুক্ত প্রকাশকদের পক্ষে বিতর্কিত সাংবাদিক! - দৈনিকশিক্ষা

পৃষ্ঠা-দাম বাড়িয়ে বই বিক্রি, অভিযুক্ত প্রকাশকদের পক্ষে বিতর্কিত সাংবাদিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পৃষ্ঠা ও দাম বাড়িয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের বই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে নির্দিষ্ট দাম ও পৃষ্ঠা উল্লেখ করে বইয়ের অনুমোদন নিলেও এসব প্রকাশনা সংস্থাগুলো বেশি পৃষ্ঠার বই বাজারজাত করছে। এ উছিলায় অনুমোদিত মূল্যের দ্বিগুণ দাম রাখা হচ্ছে বইয়ের। ফলে অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।  এদিকে অভিযুক্ত লেকচার পাবলিকেশন্সসহ কয়েকটি প্রভাবশালী প্রকাশের পক্ষে টাকার বিনিময়ে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে নামধারী কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। প্রকাশকদের ফরমায়েশ অনুযায়ী তারা আজ মঙ্গলবার একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিজ নিজ প্রচারমাধ্যমে। আরো প্রতিবেদন প্রকাশের চেষ্টা চলেছে বলে জানা গেছে। এভাবে তারা জাতীয় প্রতিষ্ঠান এনসিটিবির একটি মহৎ উদ্যোগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্ত প্রকাশকদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।  

তবে, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগে অনড় এনসিটিবি। প্রথম দফায় ৭টি প্রকাশনীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮টি বইয়ের অনুমোদন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে এনসিটিবি। এরই অংশ হিসেবে বই নিয়ে কারসাজি করা ৭ প্রকাশনীকে শোকজ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের যেসব বই বাজারজাত করতে বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ও দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এনসিটিবির আইন অনুযায়ী এই কাজ শাস্তিমূলক অপরাধ।

দাম বাড়িয়ে বই বিক্রিতে অভিযুক্ত প্রকাশনীগুলো হলো, হাসান বুক হাউস, নাবীশা পাবলিকেশন্স, বাশার প্রকাশনী, কোয়ালিটি পাবলিকেশন, অক্ষরপত্র প্রকাশনী, লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেড এবং সিসটেক পাবলিকেশন্স।

জানা গেছে, হাসান বুক হাউসের উচ্চমাধ্যমিকের ২২০ পৃষ্ঠার অর্থনীতি প্রথম পত্র বইয়ের অনুমোদিত দাম ছিল ১৩০ টাকা। কিন্তু রাজধানীর বইয়ের দোকানে খুঁজে পাওয়া বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬১৬। দাম রাখা হচ্ছে ২৮৫টাকা। একই প্রকাশনীর ২৭০ পৃষ্ঠার জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র বইটির অনুমোদিত মূল্য ছিল ১৫৩টাকা। ৫৪০ পৃষ্ঠার জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র বই ছাপিয়ে তা ২৬৫ টাকায় খোলা বাজারে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।অনুমোদিত মূল্যের দ্বিগুণেরও বেশি দামে বইটি বাজারজাত করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জারি হওয়া এনসিটিবি আইনের সুস্পষ্ট লংঘন করেছে হাসান বুক হাউস।

অপরদিকে নাবীশা পাবলিকেশন্সের ২৫০ পৃষ্ঠার রসায়ন প্রথম পত্র বইটি ১৬৬ টাকায় ব্রিক্রির অনুমোদন দেয়া হলেও বাজারে পাওয়া বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৭২৮, দাম ৩১৫ টাকা।

বাশার প্রকাশনীর ৩০০ পৃষ্ঠার পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র বইয়ের অনুমোদিত দাম ছিল ১৯০ টাকা। যদিও আইন ভেঙে বাজারজাত করা হয়েছে ৩৬৮ টাকা দামের ৮৭২ পৃষ্ঠার পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্র বই।

কোয়ালিটি পাবলিকেশন প্রকাশিত ২৫০ পৃষ্ঠার রসায়ন প্রথম পত্র বইটি ১২৪টাকায় বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিল এনসিটিবি। যদিও বাজারে পাওয়া বইটির দাম ৩২৫ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৭০।

৯০ টাকা দামে ২০২ পৃষ্ঠার উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্র বই বিক্রির অনুমোদন নিয়েছিল অক্ষর পত্র প্রকাশনী। কিন্তু বাজারে পাওয়া ৬৭০ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২৭৫ টাকা।

লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে ৩০০ পৃষ্ঠার হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র বইটি ১২১ টাকায় বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাজরে পাওয়া বইয়ের দাম প্রায় ৪ গুন। আইন ভেঙে ১১৮৩ পৃষ্ঠার বই ছাপিয়ে তা খোলা বাজারে ৪৪০ টাকায় বিক্রি করছে লেকচার পাবলিকেশন্স।

সিসটেক পাবলিকেশন্স অনুমোদন পেয়েছিল উচ্চতর গণিত প্রথম পত্র বইয়ের। ২৮০ পৃষ্ঠার বইয়ের অনুমোদিত দাম ছিল ১৫৭ টাকা। কিন্তু বাজারজাত করা হচ্ছে ২৬০ টাকা দামের ৬৩০ পৃষ্ঠার বই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের যেসব বই বাজারজাত করতে বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ও দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যত্যয় ঘটিয়েছে ৭ প্রকাশনী। যে বিষয়টি এনসিটিবির নজরে এসেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক আইন ২০১৮ অনুযায়ী, এ কাজ শাস্তিমূলক অপরাধ। তাই বইগুলোর অনুমোদন বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিয়ম অনুসারে প্রাথমিকভাবে প্রকাশনা সংস্থাগুলো কার্যকর করা হয়েছে।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের উভয়ের অনুমোদন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব দেবেন তারা। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

বাজারে পাওয়া পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে ৩৩০-৩৬৩ পৃষ্ঠার বদলে বাজারে ৬০০-৮৫০ পৃষ্ঠার বই পাওয়া গেছে। এভাবে বাজারে আরও আছে, রসায়ন প্রথম পত্রে ২৫০-২৭৫ পৃষ্ঠার স্থলে ৫০০-৭০০; দ্বিতীয় পত্রে ২৫০-২৭৫-এর স্থলে ৬০০-৮০০ পৃষ্ঠা; জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রে ২৩০-২৪০-এর স্থলে ৪৫০-৫০০; দ্বিতীয় পত্রে ২৩০-২৪০-এর স্থলে ৪০০-৪৫০; হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৩০০-৩৩০ পৃষ্ঠার বদলে ১০০০-১৩০০; দ্বিতীয় পত্রে ৩০০-৩৩০-এর স্থলে ১০০০-১৪০০; উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন প্রথম পত্রে ২২০-২৪০-এর স্থলে ৬০০-৭২৫; দ্বিতীয় পত্রে ২০০-২২০-এর স্থলে ৬০০-৭২৫; অর্থনীতি প্রথম পত্রে ২৩০-২৪০-এর স্থলে ৪৫০-৬০০; দ্বিতীয়পত্রে ২৩০-২৪০-এর স্থলে ৪০০-৪৫০; ভূগোল প্রথম পত্রে ২৫০-২৭৫-এর স্থলে ৩০০-৪০০ আর দ্বিতীয় পত্রে ২৫০-২৭৫-এর স্থলে ৩০০-৪০০ পৃষ্ঠার বই।

এ বিষয়ে এনসিটির কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ৭টি প্রকাশনীর আটটি বই চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি বইগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করা হবে। 

ব্যবস্থা নেয়ার আগে নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্টদের শোকজ করতে হয়। সেটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব দেবেন তারা। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

অভিযুক্ত হাসান বুক হাউস,  লেকচার পাবলিকেশন্স, অক্ষরপত্র, নাবিশা পাবলিকেশন্স, বাশার প্রকাশনী, কোয়ালিটি পাবলিকেশন্স, সিসটেক পাবলিকেশন্সসহ কয়েকটিকে বইয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে একাধিক বিতর্কিত ও নামধারী সাংবাদিকরা। বেশি পৃষ্ঠার পক্ষে সাফাই গেয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে কয়েকজন বিতর্কিত সাংবাদিক।  টাকার বিনিময়ে তারা অভিযুক্তদের মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে এনসিটিবির সৎ উদ্যোগকে ব্যাহত করতে চায়। বিতর্কিত সাংবাদিকরা  ইতিমধ্যে এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে বলেও জাানা যায়।

চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.019263029098511